সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৭

অনুপ্রবেশ ইস্যু নয়

অনুপ্রবেশ ইস্যু নয়

মসজিদের আজান চার্চের বেল মন্দিরের কাঁসর ঘণ্টার একই সুর। মূঢ় মানুষের বুকে আঘাত করে বলে, তোমাদের চৈতন্য হোক। স্বার্থ মগ্ন হয়ে নয়, তুচ্ছতায় ছত্রছাড়া হয়ে নয়, লোভ লালসায় নাকাল হয়ে নয়। বাঁচার সার্থকতায়, নিজেকে উজাড় করে দাও অন্যের সেবায়। বিশ্বাসের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ধর্মীয় বৈচিত্র্যের ঐশ্বর্য উপভোগ করো। মৃদু মনে বাজুক ঐক্যতান। এক প্রাণে জীবনের জয়গান। না, রাজনীতি একথা মানে না। বিদ্বেষেই তাদের অসীম বিশ্বাস। শ্বাস-প্রশ্বাসে বিষ। মৃদু বাতাস যেখানে বয় সেখানে নয়ছয় হয়, তাদের বিষাক্ত ফণায়। অন্যায়ের প্রেরণায় যুদ্ধে নামে জিততে। সমাজ ভেঙে ভেঙে খেতে চায় আগ্রাসী খিদেয়। ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে নষ্ট করতে চায় সভ্যতা। বিভাজনে ভোট বাড়ানোর আয়োজন। নিরীহ মানুষ কুঁকড়ে যাক ভয়ে। দাঙ্গায় ছারখার হোক ঘরের পর ঘর। ঘৃণায় পুড়ে যাক বন্ধুত্ব। একে অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিক। মৈত্রীর মৃত্যু হোক, সাম্প্রদায়িকতার ডামায় আড়াল হোক সূর্য।বিজেপি তূর্য বাজিয়ে নির্বাচনী প্রচারে একাজটাই করতে চেয়েছে বারবার। ছলে-বলে-কৌশলে। তারা জানে, সাম্প্রদায়িকতার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সংবিধানে সব ধর্মের মর্যাদা সমানভাবে স্বীকৃত। সেটা অস্বীকার করা মানে সংবিধান বিরোধিতা। যা নিঃসন্দেহে দণ্ডনীয় অপরাধ। বিজেপি সেটা জানে বলেই, ইস্যুটাকে এনেছে ঘুরপথে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ থেকে বাধ্য হয়ে যেসব হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে, তারা শরণার্থী। মানবিক কারণে তাদের থাকার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। আগত মুসলমানরা কিন্তু শরণার্থী নয়, তারা অনুপ্রবেশকারী। পশ্চিমবঙ্গে তাদের কোনও স্থান নেই। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠান হবে।নির্বাচনী প্রচারে সব নেতারাই যা বলেন, তার লক্ষ্য থাকে একটাই, ভোট ব্যাঙ্ক। বাংলাদেশ সীমান্ত লোকসভায় কেন্দ্র বসিরহাট দখল করতে চায় বিজেপি। কেন্দ্রে মুসলমান ৬০ শতাংশ, হিন্দু ৪০ শতাংশ। এখান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন হুমায়ূন কবীর, রেণু চক্রবর্তী, মোহাম্মদ ইসহাক, গুরুদাস দাশগুপ্তের মতো বিদ্বজ্জনেরা। তখন ধর্মীয় বিভাজনের প্রশ্নই ওঠেনি। রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে মানুষ ভোট দিয়েছেন। এবার এই কেন্দ্রে ছজন প্রার্থীর মধ্যে চারজন মুসলমান, দুজন হিন্দু। মুসলমান ভোট চারজনের ভাগাভাগিতে কেউ বেশি পাবে না। বিজেপি চাইছে, হিন্দু ভোটের পুরোটাই পকেটে পুড়তে। যদি সেটা পারে জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।হিন্দুত্ববাদীদের স্বার্থ রক্ষায় ২০০৩ এ এনডিও সরকারের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী আইএমডিটি অ্যাক্ট বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কংগ্রেস আর বামপন্থীদের প্রতিবাদে তা খারিজ হয়ে যায়। সেই সময় দফতরবিহীন মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাজপেয়ীকে সমর্থন করেছিলেন। উপাধ্যক্ষের সামনে কাগজের বাণ্ডিল ছুঁড়ে বলেছিলেন, এতে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা আছে। তাদের বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠাতে হবে।মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ফের আইএমডিটি অ্যাক্ট বাতিলের চেষ্টা করলে লাভ হবে না। সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সংসদের সমর্থন ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। দল হিসেবে এককভাবে বিজেপি কিছুটা এগিয়ে থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে একই সরকার গড়া তাদের কাছে স্বপ্ন মাত্র। জোট সরকার গড়লেও দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন তিনি পাবেন না। কংগ্রেস আর বামপন্থীদের বিরুদ্ধে যাবে। মোদী সেটা জানেন। অনুপ্রবেশকারীর বিষয়টা কোথাও ইস্যু নয় জেনেও তিনি এটাকে সামনে এনেছেন। শুধু বসিরহাট কেন্দ্রটি দখলের লক্ষ্যে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025