ইসমাইল হোসেন: পাসের এক বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি শ্রম আইন। ফলে শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকারও হতে হচ্ছে তাদের।
বিধিমালা প্রস্তুত না হওয়ায় আইনটির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী দুই মাসের মধ্যেই এ বিধিমালা প্রস্তুত হবে।
ট্রেড ইউনিয়ন, গ্রাচ্যুইটি, গ্রুপ বিমাসহ শ্রমিকদের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও অধিকার সমুন্নত রেখে গত বছরের ১৩ মে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৩’ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এর আগে ২২ এপ্রিল আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
একই বছরের ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হয়।
আইনটি পাসের দিন তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, এ আইন পাস হলে শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থগিত করা জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে।
এর আগে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আইনটি পাস করলেও সে সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৫৬টি সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেগুলো গ্রহণ করেনি। আবারো আইনটি সংশোধিত হয়ে মন্ত্রিসভায় ওঠে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, এ আইনে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার সুবিধার বিধান রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বর্তমান আইনে ট্রেড ইউনিয়নের নামের তালিকা মালিকপক্ষকে সরবরাহ করতে হতো। তবে নতুন আইন পাস হওয়ার পর নামের তালিকা মালিকপক্ষকে দিতে হবে না।
যেসব প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১০০ জন শ্রমিক রয়েছেন, সে সব প্রতিষ্ঠানে বিমা বাধ্যতামূলক করা হয় আইনে। ৯০ দিনের মধ্যে বিমা দাবি নিস্পত্তির বিধানও রাখা হয়।
এছাড়া আইনটি পাস হলে শ্রমিকদের গ্রাচ্যুইটি সুবিধার জন্য কোনো শ্রমিকের চাকরির মেয়াদ ১২ বছর হলে বছরপ্রতি এক মাসের মজুরির সমান এবং ১২ বছরের বেশি হলে বছরপ্রতি দেড় মাসের মজুরির সমান গ্রাচ্যুইটি পাওয়ার কথা।
শ্রমিকদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা, শ্রমিক অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করতেই এ আইন করা হয়।
২০০৬ সালের আইন ২০১৩ সালে সংশোধিত আকারে পাস হলেও এর শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার স্পষ্ট না থাকায় শ্রমিক সংগঠনগুলো আইনটির সমালোচনা করে আসছিলেন।
উপরন্তু বিধিমালা না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে।
সাত বছর পর আবারো আইনটি সংশোধিত আকারে পাস হলেও এক বছরে বিধিমালা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।
সংশোধন প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, এতে গলদ এবং অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে।
চাকা না থাকলে গাড়ি চলবে কিভাবে, প্রশ্ন রেখে ইসমাইল বলেন, তবুও বিধিমালা হলে বোঝা যাবে কার্যকর প্রক্রিয়া কেমন হবে।
শ্রমিকদের জন্যই শ্রম আইন উল্লেখ করে শ্রমসচিব মিকাইল শিপার বাংলানিউজকে বলেন, আইন বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।
এর সঙ্গে অনেক স্টেকহোল্ডার জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। আশা করি, আগামী দুই মাসের মধ্যে করতে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ করতে পারব।
সরকারি কারখানার শ্রমিকরাও এ বিধিমালায় অন্তর্ভূক্ত হবেন, বলেন শ্রমসচিব।