বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ২০১২ সালে দেশটিতে ছয় হাজার ৯০০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসী ভারতীয়রা। অন্যদিকে এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে রেমিট্যান্স প্রাপ্তির তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি রেমিট্যান্স নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরো দেখা যায়- ২০১২ সালে ভারতের পর ৬ হাজার কোটি ডলার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন, তৃতীয় স্থানে ফিলিপাইনের রেমিট্যান্স আয় দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলার, চতুর্থ মেক্সিকোর দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলার। আর দুই হাজার ১০০ কোটি ডলার নিয়ে যৌথভাবে পঞ্চম অবস্থানে আছে নাইজেরিয়া ও মিশর। এছাড়া এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান, সপ্তম স্থানে থাকা ভিয়েতনামের রেমিট্যান্সের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলার। এরপর ৭০০ কোটি ডলার নিয়ে লেবাননের অবস্থান অষ্টম। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের অভিবাসন ও উনয়ন সংক্ষিপ্ত বিবৃতির (ডবিস্নউবিএমডিবি) তথ্যমতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গত বছর ৪০ হাজার ১০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা ২০১১ সালের তুলনায় পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ বেশি। এছাড়া পরবর্তী তিন বছর ২০১২ সালের তুলনায় আট দশমিক আট শতাংশ বেশি হারে রেমিট্যান্স আসবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে চার গুণ। ২০১৫ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ হবে ৫১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ১০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যার পরিমাণ ২০১১ সালের তুলনায় ১২ দশমিক আট শতাংশ বেশি।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন অর্থনীতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু বলেন, অভিবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তারা বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপক সম্পদের সৃষ্টি করে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের বেশিরভাগ অদক্ষ অভিবাসী শ্রমিকরা উপসাগরীয় সহযোগী কাউন্সিলের (জিসিসি) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে কাজ করছে। এছাড়া ভারতের দক্ষ শ্রমিকদের একটা বিরাট অংশ যুক্তরাষ্ট্র ও উচ্চআয়ের দেশগুলোতে কাজ করছেন। প্রবাসী আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে বিশেষ প্রণোদনা দিলে প্রতি বছর ২০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আনা সম্ভব বলে মনে করেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো মিলনায়তনে রেমিট্যান্সের ব্যবহার নিয়ে জরিপ সংক্রান্ত এক কর্মশালা উদ্বোধনকালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্জিকা বছরের হিসেবে ২০১২ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৪২০ কোটি (১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। দেশের ইতিহাসে এক বছরে এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানান, রেমিট্যান্স দেশের আর্থিক খাতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে ১৫৭টি দেশে ৮৫ লাখের মতো লোক কর্মসংস্থানে রয়েছে। রেমিট্যান্স নিয়ে জরিপ চলাকালে প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না দেখতে হবে। গার্মেন্টে যেভাবে হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, তেমনি রেমিট্যান্স আনার লক্ষ্যে প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে প্রস্তাব মন্ত্রীর। রেমিট্যান্সের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় তা ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা কোনো বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
Leave a Reply