বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৬:৪৮

ধীর গতিতে চলছে রফতানি বহুমুখীকরণ

ধীর গতিতে চলছে রফতানি বহুমুখীকরণ

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশের রফতানি বহুমুখীকরণে ধীর গতি দেখা দিয়েছে। রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি যা আশা করা হয়েছিল তা হয়নি। ৬ষ্ঠ পরিকল্পনায় রফতানি-জিডিপি’র অনুপাতের লক্ষ্য ছিল ২২ দশমিক ১ ভাগ কিন্তু অর্জিত হয়েছে ২০ দশমিক ২ ভাগ। বুধবার সকালে নগরীর পরিকল্পনা কমিশনে এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা(২০১১-১৫) এর মধ্যমেয়াদী বাস্তবায়ন পর্যালোচনায় এই তথ্য জানানো হয়।

পর্যালোচনা উপস্থাপনা করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের(জিইডি) সদস্য শামসুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থ সচিব মাহাবুব আহমেদ, পরিবেশ ও বন সচিব নজিবুর রহমান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও সমাজকল্যাণ সচিব নাছিমা বেগম প্রমুখ।

মধ্যমেয়াদী প্রতিবেদনে বলা হয়, অনিশ্চিত রাজস্ব আয়, কর, আধুনিকায়ন পরিকল্পনা ধীর গতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। উচ্চ অগ্রাধিকার এলাকাসমূহ পুনর্বিন্যাস, সরকারি ক্রয় সমস্যা এবং অবকাঠামো খাতে পাবলিক প্রাইভেট অংশীদারিত্বের গতির অভাব রয়েছে। জিইডির মধ্যবর্তী মূল্যায়নে  বলা হয়েছে, আরএমজি’র পাশাপাশি নিম্ন পর্যায়ে থেকে উচ্চ পর্যায়ের পর্যাপ্ত দ্রব্যের বহুমূখীকরণ বৃদ্ধি করতে হবে। আইসিটি, চামড়া, পাটজাত দ্রব্য এবং পাদুকা শিল্পের দক্ষতা দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে রফতানিখাতে বহুমুখীকরণের ক্ষেত্র শক্তিশালী হবে।

৬ষ্ট পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়, ২০১৩ সালে কর জিডিপি’র অনুপাত লক্ষ্য ছিল ১১ দশমিক ২ ভাগ কিন্তু অর্জিত হয়েছে মাত্র ১১ ভাগ। এছাড়া ২০১৩ সালে জিডিপি লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ২ ভাগ কিন্তু অর্জিত ৬ ভাগ। গত দুই বছরে কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার ২ থেকে ৩ ভাগ এ নেমে এসেছে। যে কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত না হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালের বিশ্ব মন্দার ঢেউ বাংলাদেশেও পড়েছে। কাঙ্ক্ষিত হারে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি। রাজনৈতিক অস্থিরতাও অর্থনীতির গতি টেনে ধরেছে।

তবে জিইডির মধ্যবর্তী মূল্যায়নে আরো দেখানো হয়েছে, ২০১১-১৩ সালের মধ্যে চায়না, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। অপরদিকে অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।পরিবহন খাতে যেমন, সড়ক, সেতু, রেলপথ ও বন্দর ব্যবস্থার আশানুরুপ উন্নয়ন হয়নি। বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ পর্যাপ্ত হলেও বাস্তবায়নে ধীর গতি হয়েছে।  সড়ক বিভাগ ১৫৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে এক কোটি চার লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তিন বছরে প্রায় ৬১ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ছিল। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তিন বছরে দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার জনের।

পর্যালোচনা জিইডি সদস্য জানান, ৬ষ্ট পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশল হিসেবে বিদ্যুত, জ্বালানি, পরিবহন ও অন্যান্য খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। ২০১৫ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার সাড়ে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে পরিকল্পনায়। সর্বশেষ দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ২ শতাংশে রয়েছে বলে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। লক্ষ্য পূরণে দুই বছরে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৪ শতাংশ কমাতে হবে। এ অর্জনকে অনেক ভাল মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ। মধ্যবর্তী মূল্যায়ন প্রতিবেদনের মতে, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল ২০১৩ সালের মধ্যে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৯ হাজার ৫৯৮ মেগাওয়াটে উন্নীত করা যা, ২০১০ সালের উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিনিয়োগ বাড়ানো, মোট দেশজ আয়ে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে উন্নীত করা, দ্রব্যমূল্যের গতি রোধ করে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ অনেক লক্ষ্যই অপূর্ণ থাকবে। তা ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ, জিডিপির সঙ্গে কর আদায়ের অনুপাত, সুশাসন নিশ্চিত করাসহ বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতিও পূরণ হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জিইডির মধ্যবর্তী মূল্যায়নে আরো বলা হয়, দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের মানুষের দৃঢ়তা বাড়ানো এবং মানুষের জীবন জীবিকার প্রাকৃতিক দূরোগের বিরুপ প্রভাব কমানোর জন্য আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন রয়েছে।

নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সবদিক থেকেই অনেক  উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে মূল্যায়নে আরো বলা হয়েছে, শিক্ষায় নারী –পুরুষের ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। বেতন বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীদের জন্য কর্মপরিবেশের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম জানান, ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৮৬ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জিত না হলেও এই অর্জন কম নয়।

জিইডির মধ্যবর্তী মূল্যায়নে দেখা গেছে, সুশাসনের ক্ষেত্রে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অনেক প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। মধ্যবর্তী মূল্যায়নে সরকারকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য যে সব কৌশল নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করতে হলে কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। এর মধ্যে একটি হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি বিচারিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে হবে। জিইডির মধ্যবর্তী মূল্যায়নে দেখা গেছে, আইসিটি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা দরকার। গ্রামীণ অবকাঠামোর উপর আরো বেশী জোর দেওয়া দরকার।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025