শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: হাইকোর্টের নিজেদের দেয়া আদেশকে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের আহবান জানালো ল’ইয়াস ভয়েস ইন্টারন্যাশনাল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে স¤প্রতি হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ল’ইয়ার্স ভয়েস ইন্টারন্যাশনাল।
গত ৯ জানুয়ারী শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ দেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক ও বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব বিবেচনায় হাইকোর্টকে নিজেদের দেয়া আদেশকে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন সম্পূর্ণ সরকারি দলের এজেন্ডা অনুযায়ী একজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য প্রকাশে মিডিয়ার ওপর যে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে – এ বিষয়টি কয়েকটি দিক থেকেই উদ্বেগের। আদালতে রিট দায়েরর পর শুনানির প্রথম দিনেই যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাকে কোনো ধরণের আত্মপক্ষ সমর্থন বা যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ দেয়ার আগেই তার বক্তব্য প্রচার বা প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এটি যথাযথ আইনী প্রকিয়ায় পরিচালিত হলে প্রথমেই কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার সুযোগ ছিল।
কিন্তু আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে প্রথমে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার/প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। এ ধরণের আদেশ আইনজ্ঞ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা আরো বলেন, আদালতের এই ধরণের রুলিং নজিরবিহীন এবং উপমহাদেশের (এমনকি বিশ্বের) ইতিহাসে এ রকম কোনো রুলিং এর কথা শোনা যায় না।
যেখানে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং ধারায় প্রতিটি নাগরিকের ফ্রিডম অফ স্পীচ এন্ড এক্সপ্রেশন (কথা বলা এবং মত প্রকাশ) এবং ফ্রিডম অফ প্রেস (প্রচার) এর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, সেখানে কোর্টের এ ধরণের রুলিং সাধারণ মানুষের সংবিধানিক মৌলিক নাগরিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শুধু বাংলাদেশের সংবিধান নয়, জাতিসংঘের Article 19 of the Universal Declaration of Human Rights এর মতে, ‘Everyone has the right to freedom of opinion and expression; this right includes freedom to hold opinions without interference and to seek, receive and impart information and ideas through any media and regardless of frontiers.’ Article 10 (Freedom of Expression) of Human Rights Act এবং European Convention of Human Rights-এ। জাতিসংঘের The International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) । চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষ একজন নাগরিকের ফ্রিডম অব স্পীস কেড়ে নিতে পারে না।
কেননা আইসিসিপিআর-এর ঘোষণা মতে, নাগরিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। রাজনৈতিক মত প্রকাশ এবং বাকস্বাধীনতার স্বাধীনতায় কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। এ নীতি মেনেই বাংলাদেশThe International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR)-তে স্বাক্ষর করেছে। আর আইসিসিপিআর-এ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দায়িত্ব হবে নাগরিক এবং রাজনীতিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৮ জানুয়ারি ২০১৫ এক জরুরি প্রেস রিলিস-এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উলেখ করেছে ।
তারা আরো বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং দেশে-বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ। তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তব্য যথেষ্ট তথ্য রেফারেন্স এবং যুক্তির মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। তিনি যে সমস্ত বই এবং পত্র-পত্রিকার রেফারেন্স দিয়েছেন, তা সবই বহুল প্রচলিত এবং বিখ্যাত। এই সমস্ত লেখার বিরুদ্ধে এই অগণতান্ত্রিক সরকার কোনো তথ্যমূলক জবাব দেয়া বা ব্যবস্থা নেয়নি।
শুধু বিএনপি’র নেতা কর্মীরা যেন তাদের নেতার নির্দেশনা বাংলাদেশের মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে না পারে, সে জন্য আওয়ামীলীগ তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দলীয় আইনজীবিদের মাধ্যমে কোর্ট-কে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ সরকার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণি করে চলেছে। কেবল একটি বক্তব্যের জের ধরে তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ৪৭টি মামলা দিয়েছে। এমনকি সরকার প্রভাব খাটিয়ে কিছু মামলায় আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিয়েছে।
সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সম্পুর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে এটা হাস্যকর। একজন রাজনৈতিক নেতা, জননেতা তাঁর দলের কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন, তা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এতে কোনো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়ার সুযোগই নাই। এমন হাস্যকর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের মাধ্যমে অবৈধ সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই হাস্যকর বানাতে চাইছেন।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দখলদার সরকার ও আওয়ামী লীগ দেশনায়ক তারেক রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার হাস্যকর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনে সরকারি বাহিনী ও আওয়ামী লীগের বর্বরত, হত্যা এবং হামলা-মামলার নিন্দা জানানো হয়। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ৩ জানুয়ারি থেকে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার তীব্র নিন্দা জানাই। এমন মানবতা বিরোধী ফ্যাসিবাদী আচরণের লাগাম টেনে ধরতে আমরা বিশ্বের সব মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এহেন পরিস্থিতিতে ল’ইয়ার্স ভয়েস ইন্টারন্যাশনাল আশা করে, বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে, জাতিসংঘ সহ বিশ্বের অন্য সব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাক্ষর করা হিউমান রাইটস চুক্তিগুলোর প্রতি সম্মান দেখিয়ে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক নেতাদের বাকস্বাধীনতার গুরুত্ব অনুধাবন করে, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত নিরপেক্ষভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত— নেবেন এবং আদালতের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাকে বাড়াবে, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে। নাগরিকদের রাজনৈতিক ও বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব বিবেচনায় হাইকোর্টকে নিজেদের দেয়া আদেশকে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি।
সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠন করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার এম এ সালাম। এলভিআই এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিষ্টার শরীফ হায়দার মৃদৃলের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এলভিআই‘র পরিচালক ব্যারিষ্টার ওয়াসিফুর রহমান তালুকদার, এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ খান, আবুল মনসুর শাহজাহান, ব্যারিষ্টার ওবায়দুর রহমান টিপু, এডভোকেট মোঃ জালাল উদ্দিন, যুক্তরাজ্য আইনজীবি ফোরামের সদস্য সচিব সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার, ব্যারিষ্টার তমিজ উদ্দিন, ব্যারিষ্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, ব্যারিষ্টার আলিমুল হক লিটন, সলিসিটর মোঃ একরামুল হক মজুমদার, ব্যারিষ্টার মোঃ মুজিবুর রহমান, এডভোকেট তানজিল আল ওহাব, জাবি সাবেক ছাত্রদল সভাপতি পারভেজ মল্লিক, মোস্তাক আহমেদ, আব্দুল বাছিত রফি, ইয়াসিন আহমেদ প্রমুখ।