শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পরবর্তী মেয়র নির্বাচনে সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের পক্ষ থেকে মেয়র প্রার্থী হলেন কাউন্সিলর রবিনা খান। বৃহস্পতিবার ডিফেন্ড ডেমোক্রেসি ইন টাওয়ার হ্যামলেস শিরোনামে পাবলিং মিটিংয়ে আগামী ১১ জুন অনুষ্ঠিত টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসাবে কাউন্সিলর রবিনা খানের নাম ঘোষণা করেন লুৎফুর রহমান।
একই সঙ্গে টাওয়ার হ্যামলেটস ইলেকশন মামলার রায়ের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করবেন বলেও ঘোষণা দেন এ মামলায় দোষি সাব্যস্ত মেয়র লুৎফুর রহমান। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ইস্ট লন্ডনের ওয়াটার লিলিতে মিটিং শুরু হয়। ওয়াটার দুটি হল পরিপূর্ন হয়ে বাইরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ অবস্থান করেন।
২০১৪ সালের ২২শে মে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে ভোটে প্রভাব বিস্তার, পোস্টাল ভোটে ফ্রডসহ নানান অভিযোগ এনে বারার ৪ জন ভোটার পিটিশন দায়ের করেন। তাদের পিটিশনের উপর ভিত্তি করে দ্যা রয়েল কোর্ট অব জাস্টিসে গঠিত বিশেষ ইলেকশন ট্রাইব্যুনালে প্রায় ৬ সপ্তাহ শুনানী শেষে ২৩ এপ্রিল মামলার চুড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং ইলেকশন কমিশনার রিচার্ড মারৌ কিউসি। ২শ পৃষ্ঠার রায়ে ৭টি অভিযোগে মেয়র লুৎফুর রহমানকে দোষি সাব্যস্ত করার পাশাপাশি ২০১৪ সালের নির্বাচন অকার্যকর করার নির্দেশ দেন তিনি।
একই সঙ্গে কাউন্সিলর আলিবর চৌধুরীকেও দোষি সাব্যস্ত করে স্টেপনীগ্রিন ওয়ার্ডের ইলেকশনও বাতিল করার কথা বলেন রায়ে। যদিও প্রথম থেকেই লুৎফুর রহমান এবং তার দল প্রথম থেকেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। কোর্টের রায় প্রকাশের পরপর টাওয়ার হ্যামলেটসে নতুন করে নির্বাচনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। ১১ই জুন অনষ্ঠিত হবে নির্বাচন। এ নির্বাচনে সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের পক্ষে বা টাওয়ার হ্যামলেটস ফার্স্টের প্রার্থী কে হবেন এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিলো। বৃহস্পতিবার সেই জল্পনার-কল্পনার অবসা ঘটান লুৎফুর রহমান।
দ্যা রয়ের কোর্ট অব জাস্টিসে টাওয়ার হ্যামলেটস ইলেকশন রায় প্রকাশের পর এই প্রথম পাবলিক মিটিংয়ে এসে বক্তব্য রাখেন লুৎফুর রহমান। এর আগে গত নভেম্বর মাসে পিডাব্লিউসির রিপোর্ট প্রকাশের পর কমিউনিটি সেক্রেটারী এরিক পিকলস টাওয়ার হ্যামলেটসে কমিশনার নিয়োগের ঘোষণা দেয়ার পরেও একই জায়গায় মেয়র লুৎফুর সমর্থনে পাবলিক মিটিং হয়েছিলো।
ওই সভার মতো বৃহস্পতিবারের জনসভায়ও লুৎফুর রহমানের সমর্থনে এসে বক্তব্য দেন লেবার পার্টির এনইসি মেম্বার ক্রিস্টিন শোক্রফ্ট, পিপল এসেম্বলির প্রতিনিধি জন রিস, ইউনাইট দ্যা ইউনিয়নের এন্ড্রো মারি, এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশী সলিসিটর্সের ফাউন্ডার চেয়ার সহুল আহমেদ, স্টপ ওয়ার দ্যা কোয়ালিশনের লিনসে জারম্যান, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট সালমা ইয়াকুব, কে এম আবু তাহের চৌধুরী, গ্রেটার সিলেটের চেয়ার নুরুল ইসলাম মাহবুবসহ আরো অনেকে। জনসভায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন জর্জ গ্যালওয়ে এমপি এবং সাবেক লন্ডন মেয়র কেন লিভিংস্টোন।
বক্তারা, ইলেকশান মামলার বিচারকের সমালোচনা করেন। রায় পক্ষপাতদুষ্ঠ বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ। বৃটেনের প্রতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বক্তারা কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। সভা থেকে এ রায়ের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল রিভিউতে যাওয়ার জন্য বক্তারা লুৎফুর রহমানের প্রতি পরামর্শ দেন। জুডিয়াল রায়ে যাওয়ার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, সে বিষয়টিও নজরে নিয়ে আসেন বক্তারা। একটি একাউন্টের মাধ্যমে জুডিশিয়াল রিভিউর জন্য অর্থ সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয়া হয় সভা থেকে। লেবার পার্টির এনইসি মেম্বার ক্রিস্টিন শোক্রফ্ট একাউন্টটি দেখাশুনা করবেন বলেও সভায় ঘোষণা দেন তিনি।
লুৎফুর রহমান মেয়র প্রার্থী হিসাবে রাবিনা খানের নাম ঘোষণার পর মঞ্চে এসে বক্তব্য রাখেন রবিনা। এ সময় তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশী হিসাবে, মুসলিম হিসাবে এবং বৃটিশ হিসাবে তিনি নিজে গর্ববোধ করেন। সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের ভালো কাজগুলো অব্যাহত রাখতে তিনি সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে যাবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন। কেন্টের মেয়ে রবিনা খান ৩ বছর বয়সে বিলাত এসেছিলেন।
১৯৯২ সালে বিয়ের পর টাওয়ার হ্যামলেটস আসেন। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আগে লেখালেখি জগতে ছিলো তার ব্যস্ততা। তার লেখা রেইনবো হ্যান্ডস এবং আয়শাস রেইবো নামে দুটি উপন্যাস আছে বাজারে।
এছাড়া চ্যানেল ফোরের টিএনফোর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে ছোট গল্প ইফ বার্ডস কেন ফ্লাই। ২০১০ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি প্রার্থী হয়ে শেডওয়েল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে ক্রিয়েটিভ কনসালটেন্ট হিসাবে বিবিসি এবং আইটিভির সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০১০ সালের অক্টোবরে লুৎফুর রহমানকে সমর্থনের কারণে লেবার পার্টি থেকে বহিস্কার হন।
অবশ্য সেই থেকে তিনি লুৎফুর রহমানের সঙ্গেই আছেন। মেয়র নির্বাচনের পর থেকে কাউন্সিলের হাউসিং ক্যাবিনেট মেম্বার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও শেডওয়েল থেকে পুননির্বাচিত হন তিনি। কেবিনেটে একই দায়িত্বে রয়েছেন এখনো।