সরকারের প্রশাসন বিশাল বড় সর হওয়া সত্যেও শেখ হাসিনার সরকার এখন পূর্বসূরীদের মতোই গোটা মন্ত্রীপরিষদকে অন্ধকারে রেখে নিজস্ব হাই প্রোফাইল মিনি কেবিনেট নিয়ে সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন।
অনেক প্রভাবশালী এমনও মন্ত্রী আছেন, জানেনও না কাল কি সিদ্ধান্ত আসছে। অথচ মন্ত্রীদের দাপটে আর অহংকারে গোটা সচিবালয় ও প্রশাসন তটস্থ। যে কারণে প্রশাসনের কাজে নেই কোন গতি। শেখ হাসিনার সরকার হাজারো ইনজেক্ট করেও প্রশাসনে গতি সঞ্চার করতে পারছেননা।
দলীয় নেতা নেত্রীদের তদবিরেও গোটা প্রশাসন এখন ত্যাক্ত বিরক্ত। তার উপর আছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির একের পর সরকারের বৈধতা নিয়ে নানা তীর্যক মন্তব্য ও বক্তব্য। সংবাদ পত্র, রেডিও, টেলিভিশন সেন্সরশীপ আরোপ করেও বিএনপির সেই সব বক্তব্য আটকানো যাচ্ছেনা। কোন না কোন ভাবে জনগনের কাছে পৌছে যাচ্ছে।
কিন্তু বিএনপিকে জনগনের কাছে যেতে দেয়া হচ্ছেনা। বিএনপি যেমন বিগত ৫ তারিখের নির্বাচন নিয়ে বিরোধীতা করছে, ঠিক তেমনি বিদেশী দাতা ও বন্ধুদের কাছেও রয়েছে নানা প্রশ্ন। হালে এই কাতারে শরীক হয়েছে যুক্তরাজ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই স্বচ্ছ ও অবাধ অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচনের কথা বলে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের সময় দুই নেত্রীর সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি একান্তেও আলাপ করেছেন:
রাজনীতিতে এই একান্তে আলোচনা নিয়ে আছে নানা সংশয়, নানা প্রশ্ন। নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার সরকারকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিলেও নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে অবগত। পার্লামেন্টে যে কারণে মোদি বক্তব্য দিতে যাননি। গণতান্ত্রিক প্রথার বিপরীতে দৃষ্ঠান্ত তিনি স্থাপন করতে যাননি। যে কারনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে ১৫ মিনিটের মতো যে একান্ত আলোচনা হয়েছে, সেখানে আগাম নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বলে মিনি কেবিনেটে সেই আলোচনা এখন তুঙ্গে। মোদি খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আগাম সবার অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচন হলে খালেদা জিয়া অংশ গ্রহণ করবেন কিনা ?
আদালতে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যে রায় আসুক না কেন, বিএনপি দলগতভাবে নির্বাচনে যাবে কিনা- যদিও ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয় ? খালেদা জিয়া একান্ত নিজস্ব সার্কেলে সেই বক্তব্য নিয়ে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক সহিংসতা ও জঙ্গি উত্থান ঠেকাতে বিএনপি সহ সকল দলের অংশ গ্রহণে নতুন আগাম নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রস্তুত কিনা মোদি জানতে চেয়েছিলেন। যে কারণে শেখ হাসিনা তার মিনি কেবিনেটে সেই প্রসঙ্গ তুলে বিস্তর আলোচনাও করেছেন।
মোদি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, একদিকে তাতে যেমন সন্ত্রাস ও জঙ্গি উত্থান ঠেকানো যাবে, অন্যদিকে রাজনৈতিক সহমত স্থাপনের ফলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
এ ছাড়াও ইউরোপ সহ যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে সহায়তা করবে।পোশাক শিল্প সহ বিনিয়োগের পথ উম্মুক্ত হবে। সব চাইতে বড় কথা মার্কিন লবি খুশী ও অধিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদির পরামর্শকে অনেক পজেটিভ হিসেবে দেখছেন।
কেননা বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মায়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে নতুন এক বীজ এই অঞ্চলে বপণ করতে যাচ্ছে। যা চীন ও ভারতের প্রভাব রুখে দিতে মার্কিনীরা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে নতুন এক রোহিঙ্গা জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেপথ্যের খেলা খেলছে, তাতে ভারত শ্যাম রাখি না কূল রাখি- উভয় দেশ এখন নরেন্দ্র মোদির দরজায় করা নাড়ছেন- এমন হিসেবের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা চাচ্ছেন নিজ দেশের মধ্যে স্থিতিশীল এক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে। না হলে আজ নায়েক রাজ্জাক আটক আছেন, কাল অন্য কিছুও ঘটে যেতে পারে।
কেননা মার্কিনীরা এই অঞ্চলে সিরিয়া স্টাইলে মারা মারির খেলা সৃষ্টি করতে চায় বাংলাদেশকে ব্যবহার করে। আবার বিশ্ব সন্ত্রাস বাদের সহযোগী হিসেবে এই অঞ্চলে মার্কিনীদের দরকার ভারতের সাথে বাংলাদেশকেও।
কেননা মার্কিনীরা চায়না আরেকটি পাকিস্তান কিংবা তালেবান এই অঞ্চলে সৃষ্টি হউক। অথচ রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন এবং ভারতের অধিক প্রভাব মার্কিনীদের হিসেবে নতুন কূটনীতি আছড় করেছে। এই হিসেব এবং চাপ সামলাতে সরকার এখন নতুন আগাম নির্বাচনের দিকেই হাটছে। শেখ হাসিনা এক ঢিলে তিন পাখী মারতে চান।
দুই নেত্রীর বিশ্বস্থ মিনি কেবিনেটের সূত্রে জানা গেছে :
পর্দার আড়ালে যদি সমঝোতা হয়ে যায়, তাহলে জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহেই সকলের অংশ গ্রহণে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কিছুটা ছাড় দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। সমঝোতার আগাম বার্তা হিসেবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর জামিন ও মির্জা ফখরুলের জামিন আদালতে মঞ্জুর হয়েছে বলে মত প্রকাশ করলেন।
লেখক: এম এ সালাম, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, প্রথম নিউজ