শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৫

তুরস্কে এরদোগানের বিপর্যয় প্রসঙ্গে

তুরস্কে এরদোগানের বিপর্যয় প্রসঙ্গে

জালাল উদ্দিন ওমর: গত ৭ জুন তুরস্কে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। আর এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস এন্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

সংসদের ৫৫০টি আসনের ফলাফল হচ্ছে জাস্টিস এন্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি ২৫৮ আসনে, রিপাবলিকান পিপলস পার্টি ১৩২ আসনে, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ৮০টি আসনে এবং পিপলস ডেমোক্রাটিক পার্টি ৮০টি আসনে বিজয়ী হয়। ভোটের শতকরা হারে জাস্টিস এন্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি ৪১%, রিপাবলিকান পিপলস পার্টি ২৫%, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ১৬.৫% এবং পিপলস ডেমোক্রাটিক পার্টি ১৩% ভোট পায়। ২০০২ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা জাস্টিজ এন্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি এবার গতবারের তুলনায় ৯% ভোট কম পেয়েছে এবং ৫৩টি আসন কম পেয়েছে।

চার বছর আগের নির্বাচনে দলটি ৫০% ভোট পেয়েছিল এবং ৩১১টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এককভাবে সরকার গঠনের জন্য ২৭৬টি আসনের প্রয়োজন আর সেক্ষেত্রে জাস্টিস এন্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি পেয়েছে ২৫৮টি আসন। ফলে দলটি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে না। আবার অন্য কোন দলও এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে না। এ অবস্থায় তুরস্কে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তুরস্কের সংসদ নির্বাচনের এই ফলাফল প্রেসিডেন্ট এরদোগানের রাজনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা ও পর্যালোচনা।

মুসলিম বিশ্বে তুরস্ক একটি অতি গুরত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী দেশ। আবার এশিয়া এবং ইউরোপের সংযোগ স্থাপনকারী ও ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বে তুরস্কের আলাদা পরিচয় ও প্রভাব রয়েছে। মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান এবং তার দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি অতি আলোচিত একটি নাম। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কে জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামপন্থী এই দলের উত্থান এবং ক্ষমতায় আরোহণ ছিল বিশ্বজুড়ে একটি আলোচিত বিষয়। অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে এবং প্রতিকূলতাকে জয় করে দলটি তুরস্কের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে দলটির যাবতীয় কর্মকান্ড এবং উত্থান।

এরদোগানের নেতৃত্বে দলটি ২০০২ সাল থেকে একটানা তুরস্কের ক্ষমতায় এবং দলটির নেতা এরদোগান ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সালে এরদোগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন এবং বর্তমানে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট। এরদোগান হয়ে ওঠেন তার দল এবং দেশের অবিসংবাদিত নেতা। এ অবস্থায় গত ৭ জুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে এরদোগান ও তার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। তবে এই ফলাফল অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত, অস্বাভাবিক এবং অনাকাক্সিক্ষত হলেও তা বরাবরই আমার কাছে প্রত্যাশিত, স্বাভাবিক এবং কাক্সিক্ষত বিষয়। কারণ এরদোগান এবং তার দলের আমি একজন একনিষ্ঠ সমর্থক হলেও, দীর্ঘদিন থেকে তার কিছু নীতির আমি কড়া সমালোচক এবং বিরোধী।

ইতিপূর্বে প্রকাশিত সিরিয়া, মিশর এবং লিবিয়া সম্পর্কিত আমার কয়েকটি প্রবন্ধে আমি এরদোগানের পররাষ্ট্রনীতির কড়া সমালোচনা করেছি, তার এই পররাষ্ট্রনীতিকে ভুল আখ্যায়িত করেছি এবং তার নীতি মুসলিম বিশ্ব এবং একই সাথে তার দলের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করেছিলাম।

চারটি কারণে এরদোগান ও তার দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি জনসমর্থন হারিয়েছে, যা নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রথমত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ বিরোধী যুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা।

দ্বিতীয়ত লিবিয়ার ক্ষমতা থেকে মুয়াম্মার গাদ্দাফীকে উৎখাতে সার্বিক সহযোগিতা।

তৃতীয়ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা।

চতুর্থত দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে এরদোগানের মতবিরোধ এবং যার ফলে আবদুল্লাহ গুলের নিষ্ক্রিয়তা। ২০১১ সালে মুসলিম দেশে দেশে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয় তাকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমারা তাদের বিরোধী শাসকদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পশ্চিমা বিরোধী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্রোহীরা যুদ্ধ করছে।

এসব বিদ্রোহীদেরকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব, সাথে রয়েছে তুরস্ক, সৌদি আরব এবং কাতারসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ। পেছন থেকে ইসরাইল কলকাঠি নাড়ছে। অপরদিকে আসাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইরান, রাশিয়া, চীন ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে এবং ত্রিশ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য নিরাপরাধ আবালবৃদ্ধবনিতা। নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিদিনই অসহায় মানুষেরা বাঁচার তাগিদে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে তো চলছেই। আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীদের সকল তৎপরতার হেড কোর্য়াটার তুরস্কে অবস্থিত। তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আজকের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তুরস্কের মাটি থেকে আসাদ বিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিদ্রোহীদের অফিস, সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং রাজনৈতিক তৎপরতা সবই তুরস্কের মাটিতে। তুরস্কের সাথে সিরিয়ার দীর্ঘ সীমান্তের সুযোগে বিরোধীরা অবাধেই তুরস্ক হয়ে অস্ত্র পাচ্ছে।

এরদোগানের এই নীতি সে দেশের সাধারণ মুসলমানরা সমর্থন করেনি। এরদোগান শুধু শুধু একটি সংকট সৃষ্টি করেছেন, যার কারণে মুসলমানদের কেবল ক্ষতিই হয়েছে। একইভাবে পশ্চিমারা তাদের দীর্ঘদিনের আরেকশত্রু লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফীকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার শ্লোগান দিয়ে তারা লিবিয়ায় হামলার জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস করে। এরপর পশ্চিমা বিশ্ব লিবিয়ায় সামরিক হামলা শুরু করে। লিবিয়ার অবিসংবাদিত নেতা গাদ্দাফী তার বাহিনী নিয়ে পশ্চিমাদের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ করেন। তিনি তার তিন সন্তানসহ জীবন দেন।এভাবে পশ্চিমারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে লিবিয়ার শাসক গাদ্দাফীকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং নির্মমভাবে হত্যা করেন।

আর দেশটিকে ধ্বংস করেন। গাদ্দাফী পরবর্তী লিবিয়া আজ এক ধ্বংসের জনপদ। লিবিয়ার জনগণ আজ গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার কিছুই পায়নি। এখানেও পশ্চিমাদের আগ্রাসনের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তুরস্কের এরদোগান, সাথে ছিল কাতার এবং সৌদি আরব। লিবিয়াকে ধ্বংস করার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল মিশরের ক্ষমতা থেকে ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট ড. মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পশ্চিমারা পাশ্চাত্য বিরোধী ড. মুরসিকে কৌশলে আরেক পাশ্চাত্য বিরোধী আসাদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেন। এক্ষেত্রেও পশ্চিমাদের পক্ষে প্রধান ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এরদোগান।

তিনি আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আসাদ বিরোধী পদক্ষেপ নিতে মুরসিকে উদ্বুদ্ধ করেন যা পশ্চিমাদেরই আসল পরিকল্পনা। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল বিরোধী মিশরের প্রেসিডেন্ট ড. মুরসি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের আরেক প্রধান শত্রু আসাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন। আর এটা ছিল মুরসির ঐতিহাসিক ভুল। আর পশ্চিমা বিশ্ব এটাই চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের দুই শত্রু ড. মুরসি এবং আসাদ যখন নিজেরাই নিজেদের শত্রু হয়ে গেছে তখনই পশ্চিমারা ড. মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাজটি সম্পন্ন করে।

পশ্চিমারা মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাজ তাড়াতাড়িই শুরু করে এবং আসাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের দুই মাসের মধ্যেই ড. মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হন। গণতন্ত্র হত্যাকারী মিশরের সেনাবাহিনীকে নীরবে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব। মিশরের সেনাবাহিনী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামরত কয়েক হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করলেও এক্ষেত্রে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের সোল এজেন্ট যুক্তরাষ্ট্র মিশরের সেনাবাহিনীর পক্ষেই অবস্থান নেয়।

এরদোগান এখানে ও পশ্চিমাদের হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অবশ্য এরদোগান পরবর্তীকালে তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু ততক্ষণে সবই শেষ। এটা নিশ্চিত যে, তুরস্কের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না পেলে লিবিয়ার ক্ষমতা থেকে গাদ্দাফীকে উৎখাত করতে পশ্চিমা বিশ্ব কখনোই সফল হতো না। একইভাবে তুরস্কের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না পেলে সিরিয়ার আসাদ বিরোধী যুদ্ধ কখনোই এতটুকু অগ্রসর হতো না এবং পশ্চিমা বিশ্ব আসাদের বিরুদ্ধে এত যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে পারত না।

একইভাবে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এরদোগানের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় মুরসি যদি আসাদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতেন তাহলে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পশ্চিমা পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হতো না। যে এরগোদানকে মুসলিম বিশ্বের ত্রাণকর্তা হিসেবে নিপীড়িত-নির্যাতিত মুসলমানরা মনে করেছিল, সেই এরদোগানই পশ্চিমা বিশ্বের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংসের প্রধান সহযোগীর ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছেন। বিজ্ঞানের মতই রাজনীতিও বেসিক কিছু নিয়ম মেনে চলে।

সেটা হচ্ছে শত্রুর শত্রু বন্ধু, শত্রুর বন্ধু শত্রু। বন্ধুর বন্ধু বন্ধু আর বন্ধুর শত্রু শত্রু। এই নিয়মেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখানে আদর্শ কোন ফ্যাক্টর নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু বলেই চীন, রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা, উত্তর কোরিয়া সাথে ইরানের ভালো সম্পর্ক। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু বলেই সিরিয়ার সাথে চীন, রাশিয়া এবং ইরানের ভালো সম্পর্ক। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলে প্রধান শত্রু বলেই হামাস এবং হিজবুল্লাহর সাথে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের ভালো সম্পর্ক। এই সমীকরণ রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে এবং এই সমীকরণ ভুল করলে বিপর্যয় অনিবার্য। যুদ্ধের ময়দানে একটি ভুল যেমন দেশকে পরাধীন করে, ঠিক তেমনি রাজনীতিতে ভুল নিয়ে আসে বিপর্যয়, যা যুগ যুগ ধরে বহন করতে হয়।

এরদোগানের উচিত ছিল পশ্চিমা বিরোধী শক্তি যেমন আসাদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়া, গাদ্দাফীর নেতৃত্বাধীন লিবিয়া, মুরসির নেতৃত্বাধীন মিসর এবং ইরান, হিজবুলল্লাহ, হামাসের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করা এবং তাকে সংহত করা। এ জোটের সাথে থাকত রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলাসহ পশ্চিমা বিরোধী শক্তিসমূহ। ফলে পৃথিবীতে শক্তির একটি ব্যালেন্স হতো, যা মুসলিম বিশে^র উত্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করত। কিন্তু তা না করে পশ্চিমা বিরোধী এরদোগান, পশ্চিমা বিরোধী আসাদ এবং গাদ্দাফীকে উৎখাতের জন্যই পরিচালিত যুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করলেন। এতে মুসলিম বিশে^র অপার সম্ভাবনা অঙ্কুরেই ধ্বংস হলো এবং নিজেও বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছেন।

তুরস্কে দীর্ঘদিন থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। অথচ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এরদোগান চেয়েছেন সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে, যার ফলে এরদোগানের ক্ষমতালিপ্সা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ইস্যুতে দলটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলের সাথে এরদোগানের বিরোধ এবং রাজনীতিতে গুলের নীরবতা এরদোগান ও দলকে দুর্বল করেছে। যার ফলে এরদোগানের দলের জনপ্রিয়তা কমে গেছে, যা ভোটে প্রতিফলিত হয়েছে। এ অবস্থায় তুরস্কের রাজনীতিতে এরদোগান এবং তার দল বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।

এই সুযোগে সাম্রাজ্যবাদীরা রাজনীতিতে অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। সামরিক বাহিনীকে উসকে দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের চেষ্টা করবে। আর সেখানে যদি বাংলাদেশের ১/১১-এর মতো অথবা মিশরের সিসির মতো কোনো সরকারের আবির্ভাব হয় এবং সেই সরকার যদি এরদোগান ও তার দলের বিরুদ্ধে নির্মূল অভিযানে নামে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ জাতিয়তাবাদী ও ইসলামপন্থীদের নির্মূল করতে সাম্রাজ্যবাদীরা মোটেই বসে নেই।

সুতরাং এরদোগানের উচিত হবে শক্তহাতে এবং ঠান্ডা মাথায় কৌশলী পন্থায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। তার জন্য সকল পক্ষের সাথে সমঝোতায় পৌঁছতে হবে এবং যে কোনো উপায়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আশাকরি এরদোগান বিজ্ঞতার পরিচয় দিবেন এবং এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠবেন।

লেখক: প্রকৌশলী ও কলামিস্ট




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024