শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৬

দাড়ি কি রাখতেই হবে না রাখলে কি জান্নাতে যাওয়া যাবে না

দাড়ি কি রাখতেই হবে না রাখলে কি জান্নাতে যাওয়া যাবে না

মাওলানা মনযূরুল হক: মানুষের ব্যক্তিত্ব বোঝা যায় তার পোশক-আশাকে। মুসলিমদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে আলাদা করতে এবং তাদের মধ্যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা তৈরি করতে আল্লাহ তাদের নির্দিষ্ট একটি ইউনিফর্ম দিয়েছেন।

পুরুষের ইউনিফর্ম হলো ঢিলেঢালা পুরুষালী পোশাক, যা পায়ের গোড়ালির উপর থাকবে। মুখে থাকবে প্রাকৃতিক দাড়ি, গোঁফ ছেটে রাখা হবে। কিন্তু ইসলামি ইউনিফর্মের দাড়ি অংশটাকে সাধারণ মুসলিমরা তো বটেই, অনেক নিষ্ঠাবান মুসল্লি পর্যন্ত অবহেলা করে থাকে । অথচ দাড়ি কেটে একজন মানুষ অনেক ভাবে ইসলাম লঙ্ঘন করে থাকে-

আল্লাহর অবাধ্যতা : আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত, পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ [সা.] এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। যাদের দাড়ি ছিল না আর গোঁফ ছিল বড়। রাসুলের [সা.] কাছে তাদের এই অবয়ব দেখে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেন।

জিজ্ঞেস করেন, কে তোমাদের এমন করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা। তিনি তখন ইরশাদ করেন, আমার রব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত, তিনি আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি লম্বা রাখি এবং গোঁফ ছোট রাখি। (তাবারি, ফিক্বহুস সিরাহ পৃষ্ঠা-৩৫৯ ) সুতরাং দাড়ি কাটা মানে আল্লাহর নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ।

রসুলের [সা.] আদেশ অমান্যকরণ : ইবন ওমর [রা.] বলেন, রাসুলুল্লাহ [সা.] আমাদের আদেশ করেছেন, ‘গোঁফ ছেটে রাখো, আর দাড়িকে দীর্ঘ হবার সুযোগ দাও ।

(বুখারি ও মুসলিম) সুতরাং দাড়ি কাটলে আল্লাহর সাথে রাসুলের [সা.] আদেশও অমান্য করা হবে । যার পরিণাম সম্পর্কে কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘আর যে আল্লাহ ও তার রাসুলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। (সুরা জ্বিন, আয়াত ২৩)

সুন্নাত থেকে বিচ্যুতি : আল্লাহর প্রেরিত সব রাসুলদের বর্ণনায় দাড়ির কথা পাওয়া যায়। কোরআনে হজরত হারুন [আ.]-এর দাড়ির বর্ণনা এসেছে। জাবির বিন সামুরাহ [রা.] বলেন,রাসুলের [সা.] দাড়ি ছিল বেশ বড় । সুতরাং দাড়ি কাটা হলে নবি-রসুলগণের স্বভাব ও তাদের রেখে যাওয়া আদর্শের পরিপন্থী কাজ করা হবে।

সাহাবাদের আদর্শের খেলাফ : সাহাবাদের দৈহিক বর্ণনার মধ্যে দাড়ির দৈর্ঘ্যের কথাও এসেছে। হজরত আবু বকরের [রা.] দাড়ি ঘন ছিল, হজরত ওমর, ওসমান ও হজরত আলির [রা.] -এর দাড়ি দীর্ঘ ছিল। খেলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতকে রাসুল [সা.] আকড়ে থাকতে বলেছেন।

অমুসলিমদের অনুকরণ : আবু হোরায়রা [রা.] বলেন, রাসুল ইরশাদ করেছেন- ‘গোঁফ ছোট কর ও দাড়ি বড় কর, অগ্নি উপাসকদের থেকে ভিন্নবেশী হও।’ অন্য হাদিসে এসছে, দাড়ি বড় রাখার মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিপরীত করো। মুশরিকদের চেয়ে আলাদা হও।’ (মুসলিম শরিফ)

নারীদের অনুকরণ : দাড়ি না রাখার মাধ্যমে নারীদের মতো মুখাবয়ব বানানো হয়, যাতে প্রকরান্তরে তাদের অনুকরণ করাই হয়। ইবনে আব্বাস [রা.] বলেন, রাসুল [সা.] সে সব পুরুষদের অভিশম্পাত করেছেন যারা নারীদের অনুকরণ করে । (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামকে উপহাস : দাড়ি না রাখতে রাখতে সমাজের অবস্থা এমন হয়েছে যে যদি কোনো মুসলিম দাড়ি রাখে তাহলে তাকে ভিন্নমতাদর্শী বলে কটাক্ষ করা হয়। এছাড়াও অনেকেই আজকাল ভাবতে শুরু করেছে যে, দাড়ি রাখার আসলে তেমন প্রয়োজনই নেই। এটা ইসলামের একটি আবশ্যকীয় বিষয়কে উপহাস করার সুযোগ তৈরি করে দেয় ।

দাড়ি রাখা সুন্নাত নাকি ওয়াজিব : আমাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটা ভুল ধারণা হলো যে, দাড়ি রাখা সুন্নাত, সুতরাং এটা রাখলেও চলে না রাখলেও চলে। মনে রাখতে হবে রাসুলের [সা.] যে সব সুন্নাত সব মানুষের অনুকরণের জন্য তাকে বলে ‘সুন্নাতে ইবাদাত’। যা আমলের দিক থেকে ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তিনি দাঁড়ি কখনো কাটেননি, কাটার অনুমতি দেননি বরং তা ছেড়ে দিতে বলেছেন।

তাই দাড়ি রাখা সুন্নাতে ইবাদাত হিসেবে ওয়াজিব, যা লঙ্ঘনের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহ ও তার রাসুলের অব্যাধ্যতা করে থাকে। তাছাড়া চার মাজহাবের ইমাম, ইবনে তাইমিয়া, ইবন হাজাম, বিন বায, নাসিরুদ্দিন আলবানিসহ ন্যায়পন্থি আলেম দাড়ি কাটাকে হারাম বলেছেন। আমাদের সবার উচিত এর ওপর পরিপূর্ণভাবে আমল করা।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024