কুটনৈতিক নিউজ ডেস্ক: ভারতের জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। গত ৭ জুলাই বৌদ্ধদের পবিত্র স্থান বুদ্ধ গয়ায় বোমা হামলার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দারা এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন।
এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা ভারত, বাংলাদেশে ও মিয়ানমারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের গোয়েন্দারাও এ বিষয়ে তাদের মতো করে কাজ করছেন বলে জানান গোয়েন্দারা।
তাদের তথ্য মতে, ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন আগের তুলনায় ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ও প্রতিবেশী বাংলাদেশে শক্ত অবস্থান তৈরিতে কাজ করছে। গত বছর আসামের বোড়ো এলাকায় দাঙ্গা ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত সহিংসতায় মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছে তারা। এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রথমে আসামের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ঘাঁটি গাড়ে, ওই এলাকাতেই পূর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া মুসলমানদের ওপর গত বছর হামলা হয়।
ভারতের ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক দশক বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে ভারতের বিভিন্ন মন্দির ও জনবহুল স্থানে বোমা হামলা চালিয়ে আসা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বাংলাদেশ ও উত্তরপূর্ব ভারতের ছোট ছোট ইসলামী কট্টরপন্থী দলের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছে। মুম্বাই হামলার জন্য দায়ী লস্কর ই তৈয়েবা বর্তমানে জামায়াত-উদ-দাওয়া নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। একইভাবে ত্রাণ তৎপরতার নামে গত বছর আসামে কার্যক্রম চালায় ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। এক্ষেত্রে লস্কর ই তৈয়েবা ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের আত্মপ্রকাশে ভূমিকা রাখা পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআইয়ের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানান।
আরো একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বেশ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ করে এবং তা দেয়া হয় আসামের মসজিদভিত্তিক বড় একটি নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে। দাঙ্গা এবং সহিংসতার শিকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সরকারের ব্যর্থতায় তৈরি হওয়া অসন্তোষকে কাজে লাগায় তারা। এখনো এ ব্যাপারে তদন্ত চলতে থাকায় ওই সব নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ত্রাণ সরবরাহে নিয়োজিতরা ওই এলাকার কট্টরপন্থী মুসলিম তরুণদের প্রভাবিত করে সংগঠনে ঢোকায়। এরপর ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের বোমা হামলা, অস্ত্র চালনা ও অন্যান্য সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আসামের এ ধরনের একটি দল বুদ্ধ গয়ায় বোমা হামলা চালিয়েছে বলেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা। তারা বলছেন, বিলুপ্ত মুসলিম ইউনাইটেড লিবারেশন টাইগার্স অফ আসামের (এমইউএলটিএ) কিছু সদস্য নতুন এই জঙ্গি দল গড়ে তুলতে কাজ করেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জবাবে সম্প্রতি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তীর্থস্থান বুদ্ধ গয়ায় ডজনখানেক টাইম-বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই বোমায় যে ঘড়ি ব্যবহার করা হয়েছে, এক বছর আগেই সেগুলো আসামে আনা হয়েছিল বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। বোড়ো এলাকায় সহিংসতার পর ওই সময়টিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন।
ভারতীয় গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, শুধু আসামেই নয়, বাংলাদেশের কট্টরপন্থী বিভিন্ন গ্রুপকেও দলে ভিড়িয়েছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা শাখার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, তারা সিলেট ও চট্টগ্রামে বড় ঘাঁটি গেড়েছে। জামায়াত-শিবির, হুজি ও বিভিন্ন সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপকেও দলে টেনেছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন এবং যুদ্ধাপরাধে জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের রায়কে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে কট্টরপন্থী তরুণদের নিয়ে সন্ত্রাসী দল গঠন করছে তারা। বাংলাদেশে এরকম সন্ত্রাসী দল গড়তে লস্কর ই তৈয়েবা ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন একজোট হয়ে কাজ করছে বলেও তথ্য রয়েছে ইন্ডিয়ান সিগন্যালস- সার্ভেইল্যান্সের কাছে, যারা উগ্রপন্থীদের ওপর নজরদারি কাজ করছে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সদস্য সৈয়দ মকবুল ও ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
Leave a Reply