শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: পার্বত্য জেলা বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব (ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে) শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন তিন মাস ধর্মীয় কাজ (বর্ষা মাস) শেষে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উদযাপন করে থাকেন।
উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন, অংচ মং মার্মা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক কে. এম তারিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উৎসব উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি শৈটিং অং মার্মা গণমাধ্যমকে জানান, শান্তিপূর্ণভাবে প্রবারণা উৎসব উদযাপনে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু পাহাড়ে আনন্দে মেতে ওঠার অপেক্ষা।
জেলা শহরের ক্যাংগুলোতে রাতে মোমবাতি প্রজ্জলন, আদিবাসী পল্লীতে বিভিন্ন ধরনের পাহাড়ি পিঠা তৈরি উৎসবে মেতে উঠবে মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। গান বাজনা আর বাহারী পোশাকে সজ্জিত হয়ে রাস্তায় নেমে এসে এ উৎসবকে বরণ করে নেবে তারা। রং-বেরংয়ের ফানুস উড়িয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মারমা নাটক মঞ্চায়ন, মহারথ, মন্দিরে ছোয়াইং (খাবার) ও অর্থ দান এবং বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তাদের এ অন্যতম ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করবেন।
মধ্যরাতে রাজগুরু ক্যাং, খ্যংওয়া ক্যাং, রাম জাদি, করুনাপুর, বুদ্ধ ধাতু জাদি, সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার, আম্রকানন বিহার, খ্যাংফিয়া ক্যাংসহ বিহারগুলোয় ছোয়াং প্রদান করতে পূণ্যার্থীরা জড়ো হবেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তিন মাস ধর্মীয় কাজ (বর্ষা বাস) শেষে ও শীল পালনকারীরা প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে বিহার থেকে নিজ নিজ সংসারে ফিরে যান। এ কারণেই এ বিশেষ দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রবারণা পূর্ণিমা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এটি একটি সার্বজনীন সামাজিক উৎসব। মারমাদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বড়ুয়া, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যারাও এ উৎসবে অংশ নেয়। এ সময় সব ভেদাভেদ দূরে ঠেলে উৎসবের আমেজে মুখরিত হয় পাহাড়ি শহর বান্দরবান। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস- ফানুস উড়ানোর মাধ্যমে মানুষের জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়। যাতে পূণ্যার্থীরা সুখে শান্তি বসবাস করতে পারেন।
এছাড়া ১৯ অক্টোবর ছোয়াইং দান, প্রার্থণা অনুষ্ঠান ও ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় পুরাতন রাজবাড়ি মাঠ থেকে ‘ছংরারাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়ে লাগাইমে’ (সবাই মিলে মিশে রথ যাত্রায় যাই) বিশেষ মারমা গান পরিবেশনের মাধ্যমে মহারথ নিয়ে ক্যাংয়ের উদ্দেশ্যে রথযাত্রা শুরু হবে। এসময় উপজাতীয় নৃত্যের তালে মোমবাতি জালিয়ে রথ টানায় অংশ নেবে হাজারও মারমা তরুণ-তরুণী। এ সময় ধমীয় পূর্ণতা লাভের আশায় দান করা হবে নগদ অর্থ। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতে রথটি সাঙ্গু নদীতে উৎসর্গ করা হবে। এদিকে বৌদ্ধদের প্রবারণা উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানে হাজারও পর্যটকের আগমন ঘটেছে। উৎসবকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।