শীর্ষবিন্দু নিউজ: বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ একুশ হাজার একষট্টি জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন বিশ্বনেতাসহ বেশ কয়েকজন নামী-দামী ব্যক্তিত্ব।
রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, অন্য শ্রেণির লোকেদের চেয়ে তারা এই ভাইরাসে বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। বিশ্ব নেতাদের মধ্যে সর্বশেষ আক্রান্ত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডটন। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম পি বার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কন্যা ও উপদেষ্টা ইভানকার সাথে দেখা করার একদিন পরেই গতকাল তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির খবর জানা গেল।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কম্পিউটেশনাল সিস্টেম বায়োলজির অধ্যাপক ফ্রাঙ্কোইস ব্যালাক্স যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম টাইমকে বলেছেন, পরিসংখ্যান গত দিক থেকে অন্যান্য সময়ের থেকে এবার অনেক বেশি রাজনীতিবিদ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
এদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন ব্রাজিলের নেতা জায়ের বলসোনারো। তার শরীরেও করোনার উপসর্গ দেখা গেছে। তবে তার পরীক্ষার ফলাফল এখনো জানা যায়রি। এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডোর শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার এ কথা জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তিনি নির্ধারিত সময় আইসোলেশনে থাকবেন। সেইসঙ্গে আরও বলা হয়েছে, সোফির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ এখনও মৃদু।
তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সুস্থই আছেন। তার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনও অবধি কোনও উপসর্গ ধরা পড়েনি তার ক্ষেত্রে। তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তিনিও ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকবেন।
এর আগে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগের শিকার হয়েছেন খোদ ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদিন ডরিস। বৃহষ্পতিবার স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়ে বাষট্টির বছর বয়সী ডরিস নিজেই নিজেকে ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রেখেছেন বাড়িতে। গত ৫ মার্চ ডরিসের কিছু উপসর্গ ধরা পড়ে।
ওই দিনই ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন-সহ প্রায় একশো জন এমপি-মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাকে। আরও আক্রান্ত হয়েছেন স্পেনের রানি লেতিজিয়া। স্পেন সরকারের এক মন্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে ওই মন্ত্রীর সংস্পর্শে এসেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রানি।
বিখ্যাত ব্যাক্তিদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অস্কারজয়ী মার্কিন অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস এবং তার স্ত্রী রিটা উইলসন। বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন এই অভিনেতা। তারা দু’জনেই এই মুহূর্তে এক ফিল্মের শুটিংয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার রয়েছেন। সেখানেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেডিক্যাল টেস্টে দু’জনের শরীরেই করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
ইরান এবং ইউরোপ জুড়ে একাধিক হাই প্রোফাইল রাজনীতিবিদরা জানিয়েছেন, তারা রীতিমতো করোনা ভাইরাস নিয়ে লড়াই করছেন।
এদিকে ইরানের কাউন্টার–করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের প্রধান ইরজ হারির্চি বলেছেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি রোগের প্রাদুর্ভাবের তীব্রতা কমিয়ে দেওয়ার পরে তা নির্ণয় করা হয়েছিল। এর পরে আরো ২০ জন ইরানী সংসদ সদস্য সংক্রামিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এবং কমপক্ষে দুজন মারা গেছেন। ইরানের সঙ্কট পরিচালন সংস্থার প্রধান ইসমাইল নাজ্জারকেও কোভিড–১৯ চুক্তি করার পরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছে।
ইউরোপে ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও ইতালি প্রবীণ রাজনীতিবিদরা আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন। ফরাসী সংস্কৃতি মন্ত্রী ফ্রাঙ্ক রিয়েস্টার ৯ মার্চ পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রিয়েস্টার জাতীয় সম্মেলনে যেখানে ছিলেন সেখানে ৫ জনের করোনা ভাইরাস রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ইতালীয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা নিকোলা জিংগেরেটি একটি ফেসবুক ভিডিওতে ঘোষণা করেছেন যে তিনিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ৭ মার্চে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে তিনি বলেন ‘আমিও করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত’।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাজনীতিবিদরা কেন সাধারণ জনগণের চেয়ে বেশি হারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তার জন্য বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্কোইস ব্যালাক্স জানিয়েছেন, রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের চাইতে অনেক বেশি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তার সব সময় করমর্দন ও অনেক লোকের কাছাকাছি থাকছেন।
রাজনীতিবিদরা যখন বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন তখন কোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করেনি। এটি এই ভাইরাসের বিস্তারকে আরো প্রসারিত করছে। মঙ্গোলিয়া থেকে স্কটল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা কোভিড ১৯ এর সংস্পর্শে আসার পরে স্ব–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো অন্য রাজনীতিবিদরা এখনও স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করে চলেছেন। এখনও তারা সহকর্মীদের সংস্পর্শে আশা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেননি।