বাংলাদেশ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার জন্য কঠিন দিন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাজ্যে।
অন্যদিকে দেশটির সরকার জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এ খবর দিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ভারতের রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে হিন্ডন বিমান ঘাঁটিতে নামে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান। এই এয়ারবেসটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। বিমান বাহিনীর ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ড এয়ারবেসটির দেখভাল করে থাকে।
একটি সূত্রের দাবি, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি মালবাহী (কার্গো) বিমানে শেখ হাসিনা গাজিয়াবাদে নামেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং কয়েক জন অফিসার। জল্পনা ছিল যে, দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে শেখ হাসিনার বিমান।
কিন্তু পরে জানা যায়, দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ না করে রাজধানী লাগোয়া গাজিয়াবাদের বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করেছেন শেখ হাসিনা। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, সোমবার রাতেই তিনি লন্ডনের উড়ান ধরতে পারেন। তার পরে জানা যায়, ব্রিটেন তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও সরকারি সূত্রে এর কোনও সমর্থন মেলেনি।
তবে তেমন হলে শেখ হাসিনা আগামী কয়েক দিন দিল্লিতেই ‘সেফ হাউসে’ থাকতে পারেন। তবে ভারতে তিনি কোনও রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। গণবিক্ষোভের জেরে শুধু প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়াই নয়, বাংলাদেশও ছাড়তে হয়েছে হাসিনাকে।
সোমবার দুপুরে বোন রেহানাকে নিয়ে ঢাকার বাসভবন তথা ‘গণভবন’ ছাড়েন তিনি। তাঁকে কপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কপ্টারটি উড়িয়ে নিয়ে যান এয়ার কমান্ডার আব্বাস।
দিল্লিতে পৌঁছানোর পর ইউরোপ বা উপসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে হাসিনার জন্য বিকল্প রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা চলছে। ঢাকায় নতুন শাসনের উত্থানের মধ্যে হাসিনাকে সাময়িক আশ্রয় দেয়ায় এক ধরণের অস্বস্তিতেও পড়েছে ভারত।
এতে বলা হয়, গত সোমবার পদত্যাগ করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতের দিল্লিতে পৌঁছান শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহেনাও ছিলেন। তবে হাসিনা ভারতের কোথায় অবস্থান করছেন সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর হাসিনা কোথায় আছেন বা তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি। জয়শঙ্কর মঙ্গলবার ভারতের সংসদ বা সর্বদলীয় বৈঠকের কোথাও হাসিনার অবস্থানের বিষয়ে কিছু বলেন নি।
লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা এবং তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। তবে মন্ত্রী এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা স্বীকার করেন।
দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন বলছে, ভারতে গান্ধী পরিবারের সাথে হাসিনার সখ্যতা রয়েছে। ১৯৭৫ সালের আগস্টে হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর হাসিনা প্রথম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তিনি ভারতে সফরকালে সবসময়ই গান্ধী পরিবারের সাথে তার সময়সূচী নির্ধারিত থাকে। ৫ই আগস্ট কারফিউ ভেঙ্গে ঢাকায় লাখ লাখ বিক্ষোভকারী জড়ো হতে থাকে।
জয়শঙ্কর বলেছেন, আমাদের ধারণা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় শেখ হাসিনা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভারতে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি।
এছাড়া বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের জন্য একটি অনুরোধ পেয়েছিল ভারত। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, হাসিনা সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছান।
Leave a Reply