সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রীদের দুর্নীতি তদন্তে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে চিঠি দিয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি আপসানা বেগম।
যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে বিপুল সম্পত্তি কেনার ঘটনায় তদন্তের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়ে যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ সংস্থার নির্বাহী মহাপরিচালকের কাছে এবার চিঠি দিয়েছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির ডিরেক্টর জেনারেল গ্রীম বিগারকে একটি চিঠি দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী যাদের বিরুদ্ধে ব্রিটেনে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে সেগুলো তদন্ত, ব্রিটেনে অর্জিত সম্পদ স্থগিত করা, অপরাধীদের আইনের আওতার আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
আপসানা বেগম চিঠির শুরুতে লেখেন, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সদস্যদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পত্তি ও সম্পদের বিষয়ে ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা জানতে আমি লিখছি। যেগুলো তারা দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অপরাধের মাধ্যমে অর্জন করেছেন। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদগুলো জব্দ করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে এসব বিষয় উল্লেখ করে আপসানা বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কর জমা সংক্রান্ত তদন্ত চলছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি দাবি করেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে কোটি কোটি ডলার পাচার করেছেন।
তিনি বলেন, এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি এবং ইউকে কোম্পানি হাউজের রেকর্ডগুলোর বিষয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলো ১৫ কোটি পাউন্ডেরও বেশি মূল্যের কমপক্ষে ২৮০টি সম্পত্তি অর্জন করেছে। আল-জাজিরার তদন্তে আরও জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী আমার নির্বাচনী এলাকা পপলার ও লাইমহাউজে ৭৪টি সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
আপসানা বেগম লিখেছেন, এসব সম্পত্তি বাংলাদেশের। আমি বিশ্বাস করি, সেগুলো বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে তারা গণতন্ত্র ও নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত একটি সমাজের জন্য কাজ করতে পারে। দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জীবনের মান, কর্মস্থলের অধিকার ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বলে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।
এনসিএ মহাপরিচালকের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন অন্যায়ভাবে অর্জিত তহবিল পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইছে, আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকবো যদি আপনি স্পষ্ট করেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং এই দুর্নীতির তদন্তে অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্যভিত্তিক সব সম্পদ তদন্ত ও ফ্রিজ করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আপনারা নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, এই তহবিল ফ্রিজ ও প্রত্যর্পণ করা শুধু ন্যায়বিচারের জন্যই নয়, বাংলাদেশের জনগণের অধিকারের ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এটি যুক্তরাজ্যের সুনাম ও আন্তর্জাতিক অবস্থানের জন্যও অপরিহার্য।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।
Leave a Reply