শীর্ষবিন্দু নিউজ: আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত করার পক্ষে সরকারকে রাজি করাতে সুশীল সমাজের একটি অংশ শেষ মুহূর্তেও সক্রিয় রয়েছে। তারা চাইছে প্রধান দুই দলকে সমঝোতার পথে আনতে।
সুশীল সমাজ মনে করছেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আসন্ন নির্বাচনটি স্থগিত ছাড়া বিকল্প নেই। তাই শেষ মুহূর্তে এসেও তারা এ নির্বাচন বন্ধে তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তৎপর। এদিকে নির্বাচন বন্ধে সুশীল সমাজের যেসব ব্যক্তি সক্রিয় তাদের অনেকে ১/১১ সময়েও সক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এবারও তারা তৃতীয় শক্তির উত্থানে লাভবান হতে চায়- এমন অভিযোগও রয়েছে।
এদিকে ক’দিন আগেও সক্রিয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একটা অংশ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিরাজমান সংকট থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি উপায় বের করার আহ্বান জানান। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সরকার ও বিরোধী দলের নেতারাও এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন, আইন ও সালিশকেন্দ্র এবং টিআইবি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সংকটে বাংলাদেশ-নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এই আহ্বান জানান তারা। এসময় নাগরিক সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পুনরায় সংসদ ডেকে একটা নতুন ফর্মুলা তৈরির পরামর্শ দেন।
তারা বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করা হলে তাতে দেশে শান্তি তো আসবেই না, উল্টো দীর্ঘমেয়াদের জন্য অশান্তি আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, নির্বাচন ৫ জানুয়ারি হচ্ছে না। কারণ সংবিধান অনুযায়ী জনগণ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতিফলন হচ্ছে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, রাজনৈতিক নেতারা ব্যর্থ হলে ধর্মীয় নেতারা সামনে চলে আসতে পারেন। মিশরের মত উগ্র ধর্মীয় রাজনীতির উত্থান ঘটতে পারে। দুই দল সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে এমন আশঙ্কা দূর হবে না। ড. আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান নির্বাচন দেশের সংকটকে আরেও বেশি ঘনীভূত করবে। তাই ৫ তারিখের নির্বাচন বন্ধ করে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য পুনরায় সংসদ ডেকে একটা নতুন ফর্মুলা তৈরি করতে হবে। অধ্যাপক পিয়াস করিম বলেন, আমরা হতাশায় আকণ্ঠ ডুবে আছি। কেউ আমাদের কথা শুনছে না। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা কারো কথাই শুনছেন না।
এই সুশীল সমাজের এ অংশের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনামুখর হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের মতো আরেকটি অগণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠাই কথিত এই সুশীল সমাজের উদ্দেশ্য। খোদ প্রধানমন্ত্রীও সুশীল সমাজের এই অংশটির ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার মিরপুরে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন বন্ধের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, এবারও একদল লোক ১/১১ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। যারা ‘কিংস পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেছিল তারা এখনও সরব। অগণতান্ত্রিক সরকার হলে তাদের চাহিদা বাড়ে। তাই তারা নিজেরাই নিজেদের বিশিষ্ট নাগরিক বলে ঘোষণা করেছেন।
এ বিষয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুশীল সমাজ দেশের স্বার্থেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, তারা জানেন এ নির্বাচন দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। তাই এদের দেশদ্রোহী না ভেবে সরকারের উচিত তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা।
সূত্র বলছে, বিভিন্ন মহল এরই মধ্যে নির্বাচনবিরোধী বক্তব্য দেওয়া থেকে শুরু করে কূটনীতিক পর্যায়েও যোগাযোগ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুদলের সমঝোতার জন্য এ নির্বাচন বন্ধ করা প্রয়োজন হলেও গণতন্ত্রের জন্য তা প্রকারান্তরে হুমকি হয়েই দেখা দেবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকরাও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নানা দিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে সুশীল সমাজের এসব প্রতিনিধিকেই তুলনামূলকভাবে বেশি আস্থায় নিচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে ঢাকার এক (দেশি) কূটনীতিক বলেন, এদেশে অবস্থান করা বিদেশি কূটনীতিকরা সহজে সবখানে প্রবেশাধিকার পেয়ে যান। এজন্য তারা কোনো বিষয় জানতে শুধু সরকার বা কয়েকটি দলের ওপর নির্ভর করে না।