সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৭

বিমানের ক্লিনার থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদার

বিমানের ক্লিনার থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদার

ইমরান আলী ও নুরুল আমিন: এক সময় ছিলেন বিমানের ক্লিনার, বছর তিনেক দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানের ‘সঙ্গ পেয়ে’ দরিদ্র মুহাম্মদ আলী রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। শুধু কি চোরাচালানীর সঙ্গে যুক্ত হন তিনি? মোবাইল কোম্পানি জি ফোনের বাংলাদেশের বাজারজাত করার মালিকও হয়ে যান তিনি! এক সময়ের ক্লিনার মুহাম্মদ আলী বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক। রাজধানীর উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে তার রয়েছে আলিশান বাড়িও।

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের ৫ সদস্য আটক হওয়ার পর মূল হোতা মুহাম্মদ আলী সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর এ সকল তথ্য দেয় র‌্যাব। র‌্যাব জানায়, মুহাম্মদ আলী শিক্ষিত না হলেও হযরত শাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ব্যবহার করে শুধুমাত্র চোরাচালানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সর্বশেষ আটক হওয়া স্বর্ণের মূল্য ৫ কোটি টাকারও ওপরে।

র‌্যাব আরও জানায়, ২০০৬ সালের আগে মুহাম্মদ আলী বিমানের ক্লিনারের কাজ করতেন। পরে স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে চোরাচালান নিরাপদে বন্দর পার করে দিতেন। এভাবে টাকা কামাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে মোবাইল কোম্পানি জি ফোন চীন থেকে আমদানি করে বাংলাদেশে বাজারজাত শুরু করেন। কিন্তু থেমে থাকেনি তার চোরাচালানি কার্যক্রম। কখনো স্বর্ণ, কখনো মোবাইল ফোন, আবার কখনো ঘড়ি চোরাচালান করে আসছিলেন তিনি। এমন চোরাচালানি করেই তিনি বর্তমানে উত্তরাসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অনেকগুলো আলিশান বাড়ির মালিক হয়েছেন। পাশাপাশি কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

যেভাবে খোঁজ মুহাম্মদ আলীর
র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর আসে গত ৩১ ডিসেম্বর ভারতীয় নাগরিক জামিল ১৩৪০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। এমন খবরের ভিত্তিতে ৠাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। কিন্তু ৠাবের অগোচরেই চোরাচালানি চক্র বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণ বের করে নিয়ে যায়। ৠাব জানতে পারে স্বর্ণগুলো উত্তরার জনৈক মুহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তির বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে র‌্যাব সদস্যরা দ্রুত উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের রোড-৩ এর ই নম্বর বাসায় অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু ততক্ষণে সুচতুর মুহাম্মদ আলী স্বর্ণগুলো বাসা থেকে তার লোক লাবুকে দিয়ে মগবাজারে পাঠিয়ে দেন। অবশ্য, র‌্যাব মুহাম্মদ আলীকে আটক করে মগবাজারেই অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের এক পর্যায়ে লাবুকে পুরো স্বর্ণ ও ঘড়ির চালানসহ আটক করতে সক্ষম হয় ৠাব। এরপর তাদের দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ চালানের সঙ্গে জড়িত বিমানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা কে এম কামরুল হাসান ও স্যুইপিং সুপারভাইজার আবু জাফর ও ভারতীয় নাগরিক জামিলকে আটক করে।

যেভাবে পাচার হয় স্বর্ণ
র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় নাগরিক জামিল হংকং থেকে স্বর্ণের চালান নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তার আগে, বিমানে থাকা অবস্থায়ই তিনি বিষয়টি গডফাদার মুহাম্মদ আলীকে জানিয়ে দেন। মুহাম্মদ আলী স্বর্ণের চালান নিরাপদে পার করে দেওয়ার জন্য বিমানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বিপুকে দায়িত্ব দেন। কামরুল ভারতীয় নাগরিক জামিলকে স্বর্ণ চালানের ব্যাগটি বিমানের টয়লেটের হ্যাঙ্গারে রেখে দিয়ে বাইরে চলে আসতে বলেন। এবার কামরুল বিমানের স্যুইং সুপারভাইজারকে দিয়ে স্বর্ণগুলো বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে বের করে নিয়ে আসেন। আগ থেকেই মুহাম্মদ আলী গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরের গেটে অপেক্ষা করছিলেন। স্যুইং সুপারভাইজার আবু জাফর স্বর্ণের চালানটি বের করে দেওয়ার পর সেগুলো নিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুলসহ মুহাম্মদ আলী বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

বিমানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়ে জানান, এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার মুহাম্মদ আলীর স্বর্ণের চালান বের করে দিয়েছেন। এই চালান বের করার জন্য তাকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। মুহাম্মদ আলী দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছেন বলেও জানান কামরুল।

র‌্যাব কর্মকর্তাদের বক্তব্য
র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, র‌্যাব দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারির ফলে এই চালানটি আটক করতে সক্ষম হয়। একইসঙ্গে এই চালানের গডফাদারকেও গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, র‌্যাব আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যমতে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া র‌্যাব স্বর্ণ চোরাচালানিদের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখবে বলে জানান এটিএম হাবিবুর রহমান।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025