অনলাইন নিউজ ডেস্ক: সারা বিশ্বে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক নারী, ৪৯ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশের অভিবাসী নারী শ্রমিকের হার অত্যন্ত কম। দীর্ঘ সময় এই হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ; ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬ শতাংশ। তারপর গত এক বছরে তা আরও বেড়ে পৌঁছেছে ১৩ শতাংশে। দেশের নারী জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির এই ধারা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমেই বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহির্বিশ্বেও তাঁরা আরও বেশি সংখ্যায় যেতে থাকলে প্রবাসী-আয় তথা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
তবে কিছু বিষয়ের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। নারীরা দেশে-বিদেশে সর্বত্রই শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নির্যাতনের সহজ শিকার। দেশের ভেতরেই তাঁরা একই ধরনের কাজে পুরুষের তুলনায় কম মজুরি ও কম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিদেশে তাঁদের এই নাজুকতা আরও বেড়ে যায়। এমন দৃষ্টান্ত অনেক রয়েছে যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের নারী শ্রমিকদের দাসের মতো খাটানো হয়, অনেক সময় তাঁরা যৌন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এসব কারণে অনেক নারী কর্মমেয়াদ শেষ না করেই আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হন। শুধু যে বিদেশিদের দ্বারাই তাঁরা শোষিত-নির্যাতিত হন তা নয়, এ দেশের রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালদের হাতেও সেটা ঘটে।
নারীর সাধারণ নাজুকতার বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের অধিকাংশ অভিবাসী নারী শ্রমিকের শিক্ষা-প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। এই ঘাটতি দূর করাই প্রথম করণীয়; তবে এটি সহজ কাজ নয়, স্বল্প সময়ে সম্ভবও নয়। এ লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার। প্রবাসে কাজ করতে যাওয়ার আগে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী অভিবাসন সংগঠনগুলো এ বিষয়ে কার্যকর পরামর্শ দিতে পারে। বিদেশে আমাদের দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর আরও সক্রিয়তা ও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী, তারা এ দেশের মূল্যবান জনশক্তি। দেশের ভেতরে কর্মসংস্থানের সংকটের কারণে এই বিপুল জনশক্তির বিরাট অংশকে কাজে লাগানো যায় না। তাই নারী জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি।