শীর্ষবিন্দু নিউজ: পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে/ এসেছে দারুণ মাস।’- কবিতার মতো করেই বাংলার প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। সারা বছর ধরে বসন্ত প্রেমিকরা অপেক্ষায় থাকেন কবে আসবে পহেলা ফাল্গুন।
মাঘ শেষে আজ বৃহস্পতিবার ফাল্গুনের প্রথম দিন। উৎসব প্রিয় বাঙালি এদিনে নব আনন্দে মেতে ওঠে। তাইতো দিকে দিকে চলছে বর্ণিল আয়োজন। এর কাব্যরূপ- ‘আহা, আজি এ বসন্তে/ কত ফুল ফোটে/ কত বাঁশি বাজে/ কত পাখি গায়…।’ কিংবা কবির ভাষায় বলতে গেলে-‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।’ ফাগুন হাওয়ায় দোল লেগেছে বাংলার প্রকৃতিতে। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে বাংলার সবুজ প্রান্তর।
শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজেছে এখন প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ ছোট কচি পাতা। ধীর গতিতে বাতাসের বয়ে চলা জানান দিচ্ছে নতুন কিছুর। শীতের খোলস পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন যেনো কোন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। পলাশ আর শিমুল গাছে লেগেছে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে মধুর বসন্তের সাজ-সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে অনেকেই গুনগুন করে গেয়ে উঠছেন-‘মনেতে ফাগুন এলো…’।
ফাল্গুনের আরেক পরিচয় ভাষা শহীদদের তপ্তশোতিক্ত মাস। ঊনিশ’ বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আটই ফাল্গুন মাতৃভাষা ‘বাংলা’ প্রতিষ্ঠার জন্য রফিক, সালাম, জব্বার প্রমুখ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। বারবার ফিরে আসে ফাল্গুন, আসে বসন্ত। নৈসর্গিক ক্যানভাসে রক্তাক্ত বর্ণমালা যেন এঁকে দেয় অনির্বচনীয় সুন্দর এক আল্পনা। প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে উদার সড়কের বুকে। দেয়ালগাত্র থেকে লোহিত ধারার মোহনা শহীদ মিনার পর্যন্ত।
বাংলার বন এখন উজাড় হলেও এই কংক্রিটের নগরীতে কোকিলের কুহু ধ্বনিত হয় ফাল্গুনের আগমন সামনে রেখে। ফুলের মঞ্জরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত কেবল প্রকৃতিকেই রঙিন করেনি, রঙিন করেছে আবহমানকাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণও।
ঋতুরাজের আগমনী দিনে আজ আনন্দের হাট বসবে রাজধানীসহ সারাদেশের সচেতন অগ্রসর তরুণ-তরুণীদের মনে। তাদের যেন আজ কোথাও আর হারিয়ে যেতে নেই মানা। বাসন্তী রঙা শাড়ি পরে, খোঁপায় গাঁদা, পলাশসহ নানা রঙের ফুল গুঁজে তরুণীরা বেরিয়ে পড়বেন শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, টিএসসি, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাঙালির সাংস্কৃতিক উৎসব অমর একুশে বইমেলা পর্যন্ত।
আর ছেলেরা লাল-হলুদ, বাসন্তী রঙা পাঞ্জাবি আর ফতুয়ায় নতুন করে নিজেদের সাজিয়ে নেমে আসবে পথে। একদিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর পহেলা ফাল্গুন মিলে এ উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বইমেলায় প্রাণের উচ্ছ্বাস। এ উচ্ছ্বাস শুধু তরুণ-তরুণী নয়, সবার মনেই রঙ ছড়ায় কম-বেশি। মোবাইল ফোনে এসএমএস আদান-প্রদান, ফেসবুক, টুইটার, হাইফাইভ, অরকুট প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে বরণ করা হবে ঋতুরাজ বসন্তকে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের বড় আয়োজনটি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার বকুলতলায়। অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ৭টায়। বসন্ত শোভাযাত্রা সকাল ১০টায়। বিকেলে থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আয়োজক জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। এ উপলক্ষে সঙ্গীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনের বটতলায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে। রবীন্দ্র-নজরুল ও বিভিন্ন অঞ্চলের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেবে সংগঠনটি।