শীর্ষবিন্দু নিউজ: সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগকে অকারণে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রচেষ্টাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের মর্যাদার জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৬টি পত্রিকার সম্পাদকেরা। আজ সোমবার ওই বিবৃতিতে তাঁরা উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মাননীয় প্রধান বিচারপতির আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা মনে করি দেশে গণতন্ত্র বিকাশে বিচার বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিক সমাজ এ ব্যাপারে সচেতন। বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। এই স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে সংবাদমাধ্যম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এতে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিচারপতি এ টি এম আফজালের সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের দেওয়া একটি পর্যবেক্ষণের প্রতি আমরা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ১৯৯৩ সালে সলিম উল্লাহ বনাম রাষ্ট্র মামলায় আদালত বলেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত। আদালতের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হলে তাঁকে তা মেনে নিতে হবে। [সূত্র: ৪৪ ডিএলআর (এডি) (১৯৯২) ৩০৯]। সংবিধানের ৩৯ (২) (খ) অনুচ্ছেদে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দানের কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। তাই গণমাধ্যম দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের এই ধারা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকবেন।’
সম্পাদকেরা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে প্রথম আলোর একটি উপ-সম্পাদকীয় লেখার জন্য পত্রিকার সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কেন শাস্তি দেয়া হবে না এবং কারণ দর্শানোর জন্য রুল জারি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ-সংক্রান্ত দুটি বিবৃতি ছাপানোর জন্য রোববার আরও দুটি পত্রিকা সমকাল ও নয়া দিগন্ত-এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আদালত রুল দেন এবং বিবৃতিদাতা সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আগামী বুধবার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা লক্ষ করেছি যে হাইকোর্টে এই মামলা শুনানিকালে কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। সাংবাদিকদের সততা নিয়ে ঢালাওভাবে অসত্য অভিযোগ এনে গোটা গণমাধ্যমকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন। আমরা এ ধরনের উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
একই সঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একই সঙ্গে আমরা লক্ষ করছি যে সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগকে অকারণে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা চলছে, যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের মর্যাদার জন্য ক্ষতিকর। আমরা উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মাননীয় প্রধান বিচারপতির আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন গোলাম সারওয়ার, সম্পাদক দৈনিক সমকাল; রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, সম্পাদক দ্য নিউজ টুডে; মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রধান সম্পাদক দৈনিক মানবজমিন; মাহফুজ আনাম, সম্পাদক, দ্য ডেইলি স্টার; আলমগীর মহিউদ্দিন, সম্পাদক নয়া দিগন্ত; মোয়াজ্জেম হোসেন, সম্পাদক দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস; ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক কালের কণ্ঠ; নূরুল কবীর, সম্পাদক নিউ এইজ; এম শামসুর রহমান, সম্পাদক দি ইন্ডিপেনডেন্ট; জাফর সোবহান, সম্পাদক ঢাকা ট্রিবিউন; শাহজাহান সরদার প্রধান সম্পাদক, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ; খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সংবাদ; নঈম নিজাম, সম্পাদক বাংলাদেশ প্রতিদিন; আবু হাসান শাহরিয়ার, সম্পাদক আমাদের সময়; মোজাম্মেল হক, সম্পাদক দৈনিক করতোয়া ও তসলিমউদ্দিন চৌধুরী, সম্পাদক, দৈনিক পূর্বকোণ।