শীর্ষবিন্দু নিউজ: বিশ্বে ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত, যাদের মধ্যে আড়াই কোটিরও বেশি বাংলাদেশি। আর সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে বিশ্বে প্রতিদিন পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৪০০ শিশুর মৃত্যু ঘটছে। বিশ্ব পানি দিবসের প্রাক্কালে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সুপেয় পানির প্রাপ্তির সুযোগকে একটি মানবাধিকার ঘোষণা করার পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও ৭৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিরাপদ পানির অধিকারবঞ্চিত এই বিপুল সংখ্যক মানুষের অধিকাংশই দরিদ্র। তারা হয় প্রত্যন্ত এলাকা অথবা শহুরে বস্তির বাসিন্দা। ফলে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে হাজারো শিশুর মৃত্যু ঘটছে।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে সুপেয় পানির সুযোগবঞ্চিত জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। আর এই তালিকার শীর্ষে থাকা দশটি দেশেই বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের বাস। ইউনিসেফ বলছে, চীনের ১০ কোটি ৮০ লাখ; ভারতের ৯ কোটি ৯০ লাখ; নাইজেরিয়ায় ৬ কোটি ৩০ লাখ; ইথিওপিয়ায় ৪ কোটি ৩০ লাখ; ইন্দোনেশিয়ায় ৩ কোটি ৯০ লাখ; ডি আর কঙ্গোয় ৩ কোটি ৭০ লাখ; বাংলাদেশে ২ কোটি ৬০ লাখ; তানজানিয়ায় ২ কোটি ২০ লাখ; কেনিয়ায় ১ কোটি ৬০ লাখ এবং পাকিস্তানে ১ কোটি ৬০ লাখ সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত।
ইউনিসেফের পানি, পয়নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান সঞ্জয় ভিজেসেকেরা বলেন, ধনী হোক বা দরিদ্র, প্রতিটি শিশুরই বেঁচে থাকার অধিকার, সুস্বাস্থ্যের অধিকার এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যত পাওয়ার অধিকার আছে। প্রতিটি নারী, পুরুষ ও শিশু যতক্ষণ এই সুবিধা না পাচ্ছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত সবাইকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। আর সুপেয় পানির অভাবে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয় কন্যা শিশু ও নারীদের। সুপেয় পানি সংগ্রহের ৭১ শতাংশ কাজ তাদেরই করতে হয়।
এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে পানি ও জ্বালানি। জ্বালানি খাতে, বিশেষ করে বিদ্যুত উৎদনে বিপুল পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। আগামী দিনে এই চাহিদা কীভবে পূরণ হবে তা নির্ধারণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাতে কোনো সঙ্কটের সৃষ্টি হবে কি না- সে বিষয়ে সতর্ক করতেই এ প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাবে ২০১০ সালে জ্বালানি উৎপাদনের জন্য ৫৮৩ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি খরচ হয়, যা ওই বছর মোট উত্তেলিত পানির ১৫ শতাংশ।
২০৩৫ সাল নাগাদ পানির চাহিদা ৮৫ শতাংশ বাড়লেও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে ২০ শতাংশের মতো। ওই সময় বিদ্যুতের চাহিদাও প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়বে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অন্যান্য ব্যবহারের পানির যোগান দিতে গিয়ে বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। ১৯৯৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রাজিলে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে প্রতি বছর ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক পানি দিবস পালনের প্রস্তাব পাস হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও শনিবার সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছে।