রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১০

স্বাস্থ্য গঠনের উপাদান নেই: প্রতারণা করছে হরলিক্স

স্বাস্থ্য গঠনের উপাদান নেই: প্রতারণা করছে হরলিক্স

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: নিজের বাচ্চার জন্য বাজার থেকে জুনিয়র হরলিক্স কিনে কৌতূহলের বশে বিসিএসআইআর এর একজন বিজ্ঞানী পরীক্ষা করে ডিএইচএ বা ডেকোসাহেক্সানয়িক এসিড পাননি শিশুদের জন্য তৈরি ওই খাদ্যে। স্বাস্থ্য গঠনের অন্যতম উপাদান ডিএইচএ এর নাম করে বাজারজাত করলেও জুনিয়র হরলিক্সে সে উপাদান পায়নি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। তবে হরলিক্স কর্তৃপক্ষ জিএসকে এই পরীক্ষা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এর আগে ২০০৮ সালে মিথ্যা দাবি করে বিজ্ঞাপন প্রচার করায় হরলিক্সের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এএসএ। বিসিএসআইআরের স্ট্রেংথেনিং এনালাইটিকাল অ্যান্ড মাইক্রোবিয়াল ল্যাবরেটরিজ প্রকল্পের পরিচালক রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে ডটকমকে বলেন, ডিএইচএ একটি ওমেগা-৩ প্রাইমারি অ্যামিনো এসিড। এটি মানুষের মস্তিস্ক, ত্বক এবং চোখের রেটিনা গঠনের অন্যতম উপাদান। ডিএইচএ সমৃদ্ধ খাবার খেলে মস্তিষ্ক, ত্বক এবং চোখের রেটিনার গঠন সুদৃঢ় হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রিধারী রেজাউল করিম আট মাস আগে তার বাচ্চার জন্য হরলিক্স কেনেন। তিনি বলেন, আগোরা থেকে জুনিয়র হরলিক্স কিনে বাসায় এসে দেখি এর গায়ে অন্য উপাদানের পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও ডিএইচএ’র পরিমাণ কত, তা নেই। তখনি আমার কৌতূহল হয়। ডিএইচএ-এর পরিমাণ জানতে হরলিক্সকে গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসেন তিনি।

হরলিক্স পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে বিসিএসআইআর-এর তৈরি প্রতিবেদনের একটি অনুলিপিতে বলা হয়, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর হরলিক্স নিয়ে এ পরীক্ষাটি করা হয়। একটি ইলিশ মাছের তুলনায় জুনিয়র হরলিক্সে কী পরিমাণ ডিএইচএ আছে, তা পরীক্ষা করে দেখেন বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা।

প্রতিবেদনটি বলছে, এই নিরীক্ষায় (সায়েন্টিফিক টেস্ট) ইলিশের প্রতি ৪০ গ্রামে ১০ গ্রাম তেল পাওয়া যায়। যার মধ্যে ডিএইচএ ছিল ৫৭ মিলি গ্রাম। একই পরিমাণ নিউ জুনিয়র হরলিক্স উইথ ডিএইচএ তে শূন্য দশমিক ৫৫ গ্রাম তেল পাওয়া গেলেও কোনো ডিএইচএ পাননি গবেষকরা। হরলিক্স উৎপাদনকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে)-এর মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি ম্যানেজার) লোকমান হোসেন এই পরীক্ষা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, আমাদের শুধু হরলিক্সে কোনো ডিএইচএ নাই, তবে জুনিয়র হরলিক্সে ডিএইচএ আছে। তাদের পণ্যের মান নিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরপর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

প্রতিবেদন দেখে তিনি বলেন, রিপোর্টে শুধু ইলিশ এবং হরলিক্স লেখা থাকায় আমার ধারণা গবেষক শুধু হরলিক্স পরীক্ষা করেছেন, জুনিয়র হরলিক্স নয়। বিষয়টি আবার জানতে চাইলে গবেষক রেজাউল করিম বলেন, আমি জুনিয়র হরলিক্স পরীক্ষা করেছি। ওই হরলিক্সের গায়ে কার্টুন রয়েছে। স্পষ্ট করে ইংরেজি অক্ষরে লেখা ছিল নিউ জুনিয়র হরলিক্স উইথ ডিএইচএ। এরপর লোকমান বলেন, তাহলে সেই পণ্যের ব্যাচ নম্বর, উৎপাদন তারিখ, কারা এটি বাজারজাত করেছিল, তা নিশ্চিত না করে কিছু বলা যাবে না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এরকম প্রতারণার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ না আসায় আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। ভোক্তা অধিকার আইনের ৪৪ ধারার অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি খাদ্যে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ১ এক বছর জেল এবং কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025