রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৪

বড়পুকুরিয়া হয়ে বিদ্যুৎ করিডোর পাচ্ছে ভারত

বড়পুকুরিয়া হয়ে বিদ্যুৎ করিডোর পাচ্ছে ভারত

শীর্ষবিন্দু নিউজ: বাংলাদেশের করিডোর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্ব থেকে পশ্চিম অঞ্চলে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার গ্রিড লাইনের রুটের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে দুই দেশের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি। দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় এ গ্রিড লাইন আসামের রাঙ্গিয়া রাওতা থেকে বড়পুকুরিয়া হয়ে আবার ভারতে যাবে। এ গ্রিডের বিদ্যুৎ বাংলাদেশও ব্যবহার করতে পারবে বলে জানিয়েছেন দুই দেশের বিদ্যুৎ সচিব।

বৃহস্পতিবার রূপসী বাংলা হোটেলে স্টিয়ারিং কমিটির সপ্তম বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সেদেশের বিদ্যুৎ সচিব পি কে সিনহা। ভারত তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল থেকে দেশের অন্য স্থানে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের করিডোর চেয়ে আসছিল। ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেয়ার বিষয়ে তিনটি রুট যাচাই-বাছাই করে রাঙ্গিয়া রাওতা-বড়পুকুরিয়া-ভারত লাইনটি প্রস্তাব করেছে এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি, যে গ্রিড লাইন দিয়ে ৬ থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করতে পারবে।

মনোয়ার ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আজকের সবচেয়ে সফল বিষয় হচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কারিগরি কমিটি একটা প্রতিবেদন দিয়েছে। তাদের সেই প্রতিবেদনটা আমরা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি। সেই অনুমোদনের প্রেক্ষিতে আরেকটা টেকনিক্যাল টিম করে দিয়েছি, দ্বিতীয় গ্রিড লাইনের বিষয়টা তারা পরীক্ষা করে দেখবে। করিডোরের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এটাকে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন  ভারতের বিদ্যুৎ সচিব পি কে সিনহা।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। তিনটি বিকল্পের মধ্যে তারা একটিকে বেছে নিয়েছে। এ গ্রিড লাইন ৬০০০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সক্ষম হবে। তবে বাংলাদেশ এ গ্রিড লাইন থেকে কতটা লাভবান হবে, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনোয়ার ইসলাম বলেন, আমাদের মনে হয় এখনো হিসেব করার সময় আসেনি। রিজিওনাল কো-অপারেশন ইজ আ উইন উইন সিচুয়েশন। এখানে উভয় দেশের বেনিফিট অবশ্যই। আমরা ওখান থেকে অবশ্যই কিছু বিদ্যুৎ পাব। বিস্তারিত আমরা পরে আপনাদের জানাতে পারব। বাংলাদেশ অবশ্যই এ গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাবে বলে জানান ভারতের সচিব পি কে সিনহা।

তিনি বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রচুর জল বিদ্যুতের সম্ভাবনা রয়েছে। এক অরুণাচল প্রদেশেই ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাবে কিছু বিদ্যুৎ বাংলাদেশেও যেতে পারে। মনোয়ার ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কমবেশি ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। এর মধ্যে কিছু সঞ্চালন লস কাভার করার জন্য আরো ৩০ মেগাওয়াট আনার প্রস্তাব করেছি। সেটাতে ভারত নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। আমরা পালাটানা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছি। ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিতে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আমরা একটি কারিগরি কমিটি করার বিষয়ে একমত হয়েছি। পালাটানা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দ্রুত কিভাবে বাংলাদেশে আসবে, তা খতিয়ে দেখে তিন মাসের মধ্যে একটি কারিগরি কমিটি প্রতিবেদন দেবে বলে জানান পি কে সিনহা।

স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে বিদ্যুৎ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ভারতের বিদ্যুৎ সচিব। কিভাবে এই দেশগুলো বিদ্যুৎ নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে মে মাসে দিল্লিতে বৈঠক হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রামপালের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করবে বলেও জানান ভারতের বিদ্যুৎ সচিব।

ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেয়ার বিষয় ছাড়াও বৈঠকে ভারত থেকে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং ভেড়ামারা-বহরমপুর আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কারিগরি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ সহযোগিতার বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইন স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশের ভেড়ামারা ও ভারতের বহরমপুরের মধ্যে, যে লাইন দিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে বাংলাদেশে। বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ মালিকানায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের পালাটানায় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময় বাংলাদেশের করিডোর ব্যবহার করে ভারত যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়। ওই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের কাছে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রির বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটির সপ্তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025