স্বদেশ জুড়ে ডেস্ক: মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, দৈনিক আমার দেশ প্রকাশের অনুমোদন (ডিক্লারেশন) বাতিল করা হয়নি। অন্য প্রেসেও তারা প্রকাশনা চালিয়ে যেতে পারবে তবে এ জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে। প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী একটি সংবাদপত্র ডিক্লারেশনে ঘোষিত ছাপাখানার বাইরে অন্য কোথাও পত্রিকা ছাপাতে চাইলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হয়।
তিনি জানান, ৮০ ধারা অনুযায়ী কার্যক্রম নেয়ার পর আমার দেশ কর্তৃপক্ষ আইন অনুসরণ না করে সংগ্রামের প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপায়। মাহমুদা বেগম নামে একজনকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দেখিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস থেকে আমার দেশ পত্রিকা ছাপানোর জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পত্র দেয়া হয়। পরে জানা যায় ওই মহিলা মাহমুদুর রহমানের মা এবং আমার দেশ পত্রিকার সঙ্গে তার সম্পৃক্ত থাকার এমন কোন তথ্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে ছিল না।
মন্ত্রী জানান, অস্থায়ীভাবে অন্য কোন প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপাতে হলে ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধিতকরণ) আইনের ৭ ধারা মোতাবেক প্রত্যেক সংবাদপত্রের মুদ্রাকর ও প্রকাশককে ঘোষণাপত্র ফর্ম- বি তে স্বাক্ষর করতে হয়। আমার দেশ কর্তৃপক্ষ ফর্ম বি তে কোন ঘোষণাপত্র দাখিল না করে এবং কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়েই বেআইনিভাবে প্রকাশ বিতরণ ও প্রদর্শন করেছে, যা দণ্ডনীয় অপরাধ।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আইন মেনে ফরম বি স্বাক্ষর করে আমার দেশ প্রকাশনা চালাতে পারে। মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মাহমুদুর রহমানকে ফৌজদারি আইনে গ্রেফতার করার হয়েছে, এর সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই।
আমার দেশ দীর্ঘ সময় ধরে অপপ্রচারে লিপ্ত থাকলেও কেন এত দেরিতে ব্যবস্থা নেয়া হলো সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারকে ভেবে চিন্তে পদেক্ষেপ নিতে হয়। খুব তাড়াহুড়োর কিছু ছিল। অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার আদালতের রায়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। আমার দেশ পত্রিকাকে তৃতীয় শ্রেণির ‘লিফলেট পত্রিকা’ হিসেবে উল্লেখ করে ইনু বলেন, এটি সংবাদপত্রের মূলনীতি বিন্দুমাত্র অনুসরণ করে না। এই পত্রিকার সম্পাদক কোন পেশাজীবী সাংবাদিকও নন এবং হঠাৎ করেই সংবাদপত্রের সম্পাদক সেজে সাংবাদিকতার ন্যায়-নীতি সম্পূর্ণভাবে বিসর্জন দিয়ে সংবাদপত্রকে একটি অপপ্রচার মাধ্যম হিসেবে পরিণত করেছেন। তিনি আরো বলেন, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৬ ও ৫৭ ধারা অনুযায়ী, একই আইনের ৮০ ধারা অনুযায়ী অপরাধ সংশ্লিষ্ট প্রেসের মালামাল জব্দ করা হয়েছে।”
অন্যান্য যেসব পত্রিকার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ রয়েছে সেই সব পত্রিকার সস্পাদকদের গ্রেফতার করা হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য পত্রিকাগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যারা মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিচ্ছেন তাদেরকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইন মোকাবেলা করারও পরমর্শ দেন তথ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কথিত স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত ১১ এপ্রিল আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করার পর পত্রিকাটির ছাপাখানা সিলগালা করে দেয় পুলিশ। এরপর আমার দেশ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অফিস পুলিশ নিয়ন্ত্রিত থাকায় জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের মগবাজারে আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেসে পত্রিকা ছাপানো শুরু করলে গত শনিবার রাতে সেখানেও অভিযান চালানো হয়। সংগ্রামের ছাপাখানা থেকে ছয় হাজার কপি আমার দেশ জব্দ করার পাশাপাশি ১৯ কর্মীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
Leave a Reply