মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরে আসার পথে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ফ্লাইট এমএইচ১৭ এর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশিয়ার আকাশসীমায় ঢোকার আগে ইউক্রেইনের আকাশে বিমানটির সঙ্গে তাদের সর্বশেষ যোগাযোগ হয়। বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটিতে ২৮০ জন যাত্রী এবং ১৫ জন ক্রু ছিলেন, যাদের সবাই নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমস্টারডাম বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ইউরোপীয় প্রধান বলেছেন, ওই ফ্লাইটে নেদারল্যান্ডসের ১৫৪ জন, অস্ট্রেলিয়ার ২৭ জন এবং মালয়েশিয়ার ২৩ জন নাগরিক ছিলেন।
ইউক্রেইনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ জন নাগরিক ছিলেন। তবে বিমানে আসলেই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক ছিলেন কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন।
ফ্রান্স বলেছে, তাদের অন্তত চার জন নাগরিক ওই বিমানে ছিলেন।
রাশিয়া সীমান্তের ৪০ কিলোমিটার দূরে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেইনের দোনেস্ক শহরের নিকটবর্তী রাবোভো গ্রামের কাছের একটি মাঠে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও অনেকের মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখেছেন রয়টার্সের সাংবাদিকরা।
এক উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছে।
ভ্লাদিমির নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি মাঠে ট্রাক্টর দিয়ে কাজ করার সময় একটি বিমানের শব্দ শুনতে পাই এবং তার পরপরই প্রচণ্ড জোরে গুলির শব্দ পাই। তারপর আমি দেখলাম বিমানটি ভূমিতে আঘাত করে দুই ভাগে হয়ে গেছে। সেখান থেকে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলি উড়ছিল।”
সের্গেই নামে ওই অঞ্চলের এক বিদ্রোহী বলেন, “আমি বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় একটি বিমানকে অনেক উপর থেকে নেমে আসতে দেখি এবং তারপর দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনি।”
ইউক্রেইনের ওই এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেইনের সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ চলছে। গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে ইউক্রেইনের কয়েকটি সামরিক বিমানও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ভূপাতিত করা হয়েছে। রশিয়ার সেনাবাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে উন্নত প্রযুক্তির এসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ করে আসছে ইউক্রেইন।
ইউক্রেইনের প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াতসেনিউক ইতোমধ্যে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় একটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে দোনেস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী কমান্ডার স্ত্রেলকভ বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য ইউক্রেইনের সরকারি বাহিনীকেই দায়ী করেছেন এক টুইট বার্তায়। এই টুইটে দুটি ছবিও দিয়েছেন তিনি, যাতে দূর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজির রাজাক এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এ খবরে আমি স্তম্ভিত। যতো দ্রূত সম্ভব আমরা একটি তদন্ত শুরু করছি। মাত্র চার মাস আগে, গত ৮ মার্চ মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের আরেকটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে উধাও হয়ে যায়। ব্যাপক আন্তর্জাতিক চেষ্টার পরও বিমানটির কোনো হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হুইব গোর্তার জানান, আরোহী ২৮০ জনের মধ্যে ২৩৩ জনের জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি ৪৭ জনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া ২৩৩ জনের মধ্যে ১৫৪ জনই হলেন ডাচ নাগরিক। আর বাকি ২৭ জন অস্ট্রেলিয়ান, ২৩ জন মালয়েশিয়ান, ১১ জন ইন্দোনেশিয়ান, ছয় জন ব্রিটিশ, চার জন জার্মান, ৪ বেলজিয়ান, ৩ জন ফিলিপিনো ও একজন কানাডিয়ান। এছাড়া, ১৫ জন ক্রু-ই মালয়েশিয়ান নাগরিক ছিলেন।
তবে, প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ জন নাগরিক ওই উড়োজাহাজে ছিলেন বলে জানানো হলেও পরবর্তীতে এ খবর মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও চোখে পড়েনি।
এছাড়া, উড়োজাহাজটিতে কোনো বাংলাদেশি ছিলেন কিনা তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টার্ডাম থেকে কুয়ালালামপুরগামী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সময় ১৪টা ১৫ মিনিটে ইউক্রেনের শাখতেরেস্ক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। রুশ সীমান্ত থেকে স্থানটির দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার।
ভূপাতিত হওয়ার সময় উড়োজাহাজটিতে ২৯৫ জন আরোহী ছিলো বলে নিশ্চিত করে ইন্টারফ্যাক্স।