আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ফিলিস্তিন-শাসিত গাজা উপত্যকায় আজ মঙ্গলবার পঞ্চদশ দিনের ইসরায়েলের প্রায় একতরফা বর্বর হামলা অব্যাহত আছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ছয় শর কাছাকাছি পৌঁছেছে। ইসরায়েলের দাবি, আজ সকালে তাদের আরও দুজন সেনা নিহত হয়েছে। এ নিয়ে ইসরায়েলের ২৭ জন সেনা এবং দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে দোহা ও কায়রোতে আলোচনা চলছে। মিসরের রাজধানী কায়রোতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
গাজায় হতাহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তিনি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কেরি বলেছেন, গাজায় সৃষ্ট মানবিক সংকট মোকাবিলায় চার কোটি সাত লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
আল জাজিরা টেলিভিশনের অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজায় গতকাল সোমবার ইসরায়েলি হামলায় ৫৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন শিশু রয়েছে। এ নিয়ে ৮ জুলাই থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলায় ৫৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন হাজার ৬০০ জন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। তাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার সূত্রপাত ইসরায়েলি তিন কিশোরকে সম্প্রতি অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে মনে করে ইসরায়েল। তবে হামাস তা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে—এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ শুরু করে ইসরায়েল। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরায়েল। তখন আট দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ফিলিস্তিনের দুই অংশ পশ্চিম তীর ও গাজা ২০০৭ সালের আগস্টে চলে যায় দুটি দলের নিয়ন্ত্রণে। সেই থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ পশ্চিম তীরে ও খালেদ মেশালের নেতৃত্বে হামাস গাজা শাসন করছিল। এই অবস্থায় গত এপ্রিলে দুই দলের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী নতুন করে নির্বাচনের পর চলতি বছরের শেষ নাগাদ একটি জাতীয় সরকার গঠনের কথা। কিন্তু হামাস-ফাতাহর চুক্তিকে ভালোভাবে নেয়নি ইসরায়েল। তাদের মতে, হামাস একটি জঙ্গি সংগঠন। হামাস-ফাতাহ জাতীয় ঐক্যের সরকার হলে সেই সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়ে দেয় ইসরায়েল।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের শুরু। এর পর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বাধীন সত্তা মেনে নিতে রাজি নয় ইসরায়েল।