সামন হোসেন: ইনচন এশিয়ান গেমসের আয়োজকরা আগে থেকেই বলছিলেন, অতিরিক্ত জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের পথে যাবেন না তারা। বরং তুলে ধরবেন স্থানীয় সংস্কৃতির প্রদর্শনী। তাদের স্লোগানই ছিল বৈচিত্র্য এখানে বর্ণিল।
এমনিতেই ইনচনের মেইন এশিয়াড স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে আলো, বাতাস আর নৃত্যের থিমে। অনুষ্ঠানের থিম পরিচিত করা হয়েছে এশিয়ার ভবিষ্যতের সঙ্গে। বন্দরনগর ইনচন নিজেকে পরিচিত করতে বেছে নিয়েছে জাহাজ আর বন্দরের চেনা সেই ছবিকেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা গেছে ইনচন বন্দর থেকে ছেড়ে গেছে একটি জাহাজ, ৪৫টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সেই জাহাজ ফিরে আসবে ভিন্ন এক এশিয়ায়। ঐক্যবদ্ধ, সমপ্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ এশিয়া মহাদেশের ভবিষ্যতের চেহারাটা কেমন হবে সেটা দেখা গেছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এশিয়ান অলিম্পিক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শেখ আহাম্মেদ আল ফাহাদ আল সাবার বক্তব্যেও উঠে এসেছে একই কথা।
জাঁকজমকপূর্ণ না হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছেন আয়োজকরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখানো হয়েছে ইনচনের নাগরিকরা কতটা শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য, হালের প্রচলিত ধারা ও আধুনিকতম প্রযুক্তির মেলবন্ধনও ছিল। প্রত্যেক দর্শকের আসনের নিচে ছিল এলইডি বার লাইট। এর মাধ্যমে দর্শকরাও শামিল ছিলেন উদ্বোধনী আয়োজনে। অ্যাথলেটদের প্যারেডের সময় বিশাল পর্দায় দেশের নাম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাজানো হয়েছে ধ্রুপদী ও প্রথাগত অর্কেস্ট্রা, কোরিয়ার জাতীয় সংগীত বাজানো হয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে করা নতুন সুরে।
এরপরই নেপালের মার্চপাস্টের মধ্যদিয়ে আসতে শুরু করে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ। দশ নম্বরে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্য জয়ী শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকীর হাতে থাকে লাল-সবুজ পতাকা। সেফ দ্য মিশন বশির আল মামুন। মার্চপাস্ট শেষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়ার প্রেসিডেন্ট শেখ আহাম্মেদ আল ফাহাদ আল সাবা।
তিনি এশিয়ান গেমসের মাধ্যমে এশিয়ার শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান। এপরই ইনচন এশিয়ান গেমসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক হুয়েন হং। হুয়েন তার বক্তব্যে এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। প্রচলিত প্রথা ভেঙে ইনচন এশিয়ান গেমসের মশাল প্রজ্বলন করেন কোরিয়ার বিখ্যাত অভিনেত্রী লিং উইং ই। সর্বশেষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার র্যাপার ও ডিজে সাই। তার গ্যানাম স্টাইল গানের সঙ্গে নাচতে শুরু করে পুরো স্টেডিয়াম।
২০১২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে যে গ্যাংনাম স্টাইল নাচের পরিচিত করে তোলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ক্রিস গেইল। এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতান দক্ষিণ কোরিয়ার আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড বিগব্যাং। এরপর বর্ণিল রঙের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটে ইনচন এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। শুরু হয়ে যায় পদকের লড়াই। যে লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে এশিয়ার ৪৫ দেশের ৯ হাজার অ্যাথলেট। যারা ১৭তম এশিয়ান গেমসে ৩৬ ডিসিপ্লিনে ৪৩৯টি স্বর্ণ জয়ের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন তারা। যা চলবে ৪ঠা অক্টোবর পর্যন্ত। এর আগে দুইবার এশিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। যার একটি ১৯৮২ সালে সিউলে অপরটি ২০০২ সালে বুসানে অনুষ্ঠিত হয়।