আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: শুধু মুসলিম হওয়ার অপরাধে এক যুবকের চাকরির আবেদন তারা প্রত্যাখ্যান করেছে, এই অভিযোগে ভারতের একটি প্রথম সারির হিরা রফতানি কোম্পানির বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে।
মুম্বাইয়ের ম্যানেজমেন্ট স্নাতক জিশান আলি খান হরিকৃষ্ণ এক্সপোর্ট নামে ওই সংস্থায় চাকরির আবেদন করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ইমেইল করে জানিয়ে দেওয়া হয় যারা মুসলিম নন, শুধু তাদেরই সেখানে চাকরি মিলবে।
ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করার অভিযোগে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩বি ধারা অনুযায়ী কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়াটা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সে কাজ করলে তাদের লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।
জিশান আলি খান বলেছেন, গত সপ্তাহে এমবিএ-র ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন হরিকৃষ্ণ এক্সপোর্টে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তাই অন্য বন্ধুদের সঙ্গে মিলে ১৯শে মে সন্ধ্যায় সেখানে বায়োডেটা পাঠিয়ে ইমেইলে চাকরির আবেদন করেন।
“মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে আমার কাছে জবাব চলে আসে – দু:খিত, আমরা মুসলিমদের চাকরি দিতে পারব না, শুধু নন-মুসলিমদেরই আমরা কোম্পানিতে নিই,” তিনি জানান।
জিশান ফেসবুকে সেই ইমেইলের স্ক্রিনশট পোস্ট করার পরই সোশ্যাল মিডিয়াতে তোলপাড় পড়ে যায়।
আজ ওই হিরা কোম্পানির পক্ষ থেকে সাফাই দিয়ে বলা হয় তাদের এইচআর বিভাগের একজন শিক্ষানবিশ ভুল করে ওই ইমেইলটি পাঠিয়েছিলেন।
সেই শিক্ষানবিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
জিশান ও তার পরিবার অবশ্য এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি, তারা এদিন থানায় ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার পর মুম্বাই পুলিশ হরিকৃষ্ণ এক্সপোর্টের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
জিশানের যে হিন্দু বন্ধুরা তার সঙ্গেই ওই কোম্পানিতে আবেদন করেছিলেন তারা পরদিনই সেখানে ইন্টারভিউয়ের ডাক পান। কিন্তু বন্ধুর প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদে তারাও এখন সেই কোম্পানিকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
হরিকৃষ্ণ এক্সপোর্টের ওয়েবসাইটেও দেখা যাচ্ছে এটা মূলত ঢোলাকিয়া পরিবারের পারিবারিক ব্যবসা এবং তাদের হরিকৃষ্ণ টিমেও কর্তারা সবাই হিন্দু।
ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, মুসলিমদের চাকরি না দেওয়াটাই ওই প্রতিষ্ঠানের নীতি কি না তা তারা খতিয়ে দেখবেন।
“যদি দেখা যায় মুসলিমদের বাইরে রাখাটাই তাদের প্র্যাকটিস, তাহলে সেই অনুযায়ী আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব,” কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিম আহমেদ বলেন।
জিশান আলি খানের বাবা আলি আহমেদ গোটা ঘটনায় আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের দিকেও।
“সরকার বলে মুসলিমরা ছেলেমেয়েদের পড়াশুনো করায় না। কিন্তু আমি ছেলেকে এত কষ্ট করে পড়ানোর পরও যদি চাকরির ক্ষেত্রে তার এই হাল হয়, তখন আর কিছু বলার থাকে না।’