নিউজ ডেস্ক: ভারতের ম্যাগিতে সীসা থাকলে বাংলাদেশের ম্যাগিতেও থাকবে এই আশঙ্কা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। ক্রেতাদের মধ্যে ম্যাগির প্রতি অনীহা দেখা দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এখনো নিরব। আর ম্যাগির প্রস্তুত ও বিপণনকারী নেসলে বাংলাদেশ এখনো বেপরোয়া।
ভারতের বাজারে ম্যাগি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশে মনভোলানো বিজ্ঞাপন, তিন প্যাকেটের দামে চার প্যাকেট ম্যাগি, আর স্কুলে শিশুদের ফ্রি ম্যাগি খাওয়ানোর নানা উদ্যোগ নিয়ে তারা পণ্যটির বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। নেসলে-বাংলাদেশ তাদের এই পণ্য বিক্রি করতে পারছে না বাংলাদেশের বাজারে। অনেকের মনেই আশঙ্কা বাংলাদেশের ম্যাগিতেও সীসা রয়েছে।
দেশে ম্যাগি বিক্রির জন্য সংবাদপত্র আর টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের বহর থাকলেও বিশেষ করে মা ও শিশুদের মনে ম্যাগি বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন দেশে ম্যাগির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও তথ্য না জানলেও ভারতের ম্যাগিতে পাওয়া সীসার খবর তারা মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারছেন। আর সে কারণেই পরিবারের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়ছে ম্যাগি।
বাংলাদেশ থেকে ভারতের যেসব চ্যানেল দেখা যায় সেগুলোতেও তারা ম্যাগির বিষয়ে খবরাখবর দেখছেন বলে জানালেন সচেতন ক্রেতারা। এদিকে, মঙ্গলবার নেসলে-ইন্ডিয়া ঘোষণা দিয়েছে তারা বাজার থেকে তুলে নিয়ে চারশ’ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ম্যাগি ধ্বংস করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে যেনোতেনোভাবে পরীক্ষা সেরে ‘ম্যাগিতে সীসা নেই’ বলে যে ঘোষণা বিএসটিআই দিয়েছে, আর তা ফলাও করে প্রচার করছে নেসলে বাংলাদেশ, তাতেও ক্রেতাদের মধ্যে উল্টো সন্দেহই বাড়িয়ে দিয়েছে। বিএসটিআই ও নেসলে বাংলাদেশের কথায় কান না দিয়ে ক্রেতারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন ম্যাগি নয় খাদ্য তালিকায়।
ক্রেতাদের উদ্বেগ বিএসটিআই তার যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। আর নেসলে-বাংলাদেশ বেনিয়া মনোভাব বজায় রেখে একরোখা ভূমিকায় রয়েছে। তারা বলার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের ম্যাগিতে সীসা নেই। কিন্তু এর পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভিত্তিক প্রতিবেদন হাজির করতে পারছে না। এদিকে বাজারগুলো ঘুরে দেখা যাচ্ছে ম্যাগির ক্রয় অনেকাংশেই কমেছে। সুপারশপ থেকে গলির দোকান সর্বত্রই একই চেহারা।
তবে স্রেফ ম্যাগি কেনা বন্ধ রাখাই নয়, সচেতন ক্রেতারা মনে করেন বাংলাদেশেও যত দ্রুত সম্ভব ম্যাগি নুডলস নিষিদ্ধ করা উচিত। একই সঙ্গে ভারতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাজার থেকে সকল ম্যাগি তুলে নিয়ে ধ্বংস করারও দাবি জানিযেছেন তারা।
ভারতে মাত্রাতিরিক্ত সীসা ধরা পড়ার অভিযোগে পণ্যটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটির কেন্দ্রীয় খাদ্যসুরক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এফএসএসএআই)। নির্দেশনায় সংস্থাটি বলে, ম্যাগির নয়টি অনুমোদিত ইনস্ট্যান্ট নুডলসের সবকয়টি পরীক্ষায় বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই এসব নুডুলস বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন করে উত্পাদন, আমদানি, বণ্টন এবং বিক্রিও বন্ধ রাখতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য ভারতের নুডলসে যে সীসা ধরা পড়েছে তা মিলেছে এতে ব্যবহৃত সোডিয়ামের ভেতরে। বাংলাদেশের ম্যাগিতেও এই উপদানটি ব্যবহৃত হয়। আর তা ব্যবহারের মাত্রা ভারতের চেয়েও বেশি।
সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হলে বাংলাদেশের ম্যাগি নুডলসেও সীসা ধরা পরার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই বদ্ধমূল ধারনা ক্রেতাদের। তাদের বক্তব্য, আশঙ্কা দূর করতে বিএসটিআই ও নেসলেকেই এ ব্যাপারে স্বচ্ছ পরীক্ষণ পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। ম্যাগির ব্যাপারে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সচেতন মহল।