রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৬

বৃটেনের রাণী কতটা ধনী

বৃটেনের রাণী কতটা ধনী

নাজমুল আহসান: গত বছর বৃটেনের রাণী এলিজাবেথের স¤পদ থেকে রেকর্ড সাড়ে ২৮ কোটি পাউন্ড (৩৪৯৩ কোটি টাকা) লাভ হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। এর মানে হলো, আগামী বছর রাণী ২০ লাখ পাউন্ড সরকারী কোষাগার থেকে পাবেন। কিন্তু রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মোট স¤পত্তির পরিমাণ কত? কিভাবেই বা তিনি অর্জন করেছেন এত সম্পদ?

এটি সত্য যে, রাণীর স¤পদ থেকে আয়ের পরিমাণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তার স¤পদের পরিমাণ সঠিকভাবে জানা যায় না। এর কারণ হলো, নিজের ব্যাক্তিগত স¤পদের পরিমাণ প্রকাশে রাণী বাধ্য নন। তবে বৃটেনের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক সানডে টাইমসের ‘রিচ লিস্ট ২০১৫’ মোতাবেক, রাণীর আনুমানিক স¤পদের পরিমাণ প্রায় ৩৪ কোটি পাউন্ড, যা গত বছরের চেয়ে ১ কোটি পাউন্ড বেশি।

রাণীর প্রকাশ্য আয়ের মূল উৎস ‘সভেরেইন গ্রান্ট’। এটি হলো ক্রাউন এস্টেট থেকে প্রতি বছর আয়কৃত অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ। ১৭৬০ সালে সরকারের সঙ্গে তৎকালীন বৃটিশ রাজ তৃতীয় জর্জ একটি চুক্তিতে আসেন। রাজকীয় বিভিন্ন জমিজামার আয় থেকে উদ্বৃত্ত যাবে সরকারী কোষাগারে।

এর বিপরীতে সরকারের বিভিন্ন খরচ রাজাকে আর পরিশোধ করতে হবে না, বইতে হবে না পূর্বের রাজা-রাণীদের তৈরী করে যাওয়া বিশাল ঋণের বোঝা, পাবেন বার্ষিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ। এরপর থেকে পরবর্তী সকল রাজা বা রাণীই চুক্তিটি নবায়ন করেছেন। বর্তমানে এ ক্রাউন এস্টেট পরিণত হয়েছে স্বতন্ত্র একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে।

যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ এ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ বর্তমানে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১১৫০ কোটি পাউন্ড। ক্রাউন এস্টেটের বেশিরভাগ স¤পত্তি মূলত লন্ডনে। এর বাইরে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডেও স¤পদ রয়েছে। স¤পত্তির মধ্যে রয়েছে, উইন্ডসর গ্রেট পার্ক ও অ্যাস্কট রেসকোর্স (ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতাস্থল)।

কিন্তু আবাসিক স¤পত্তি, বাণিজ্যিক কার্যালয়, দোকান, খুচরা পার্ক ও লন্ডনের পশ্চিমের রিজেন্ট স্ট্রিটের প্রায় সবটুকু রাজকীয় এ স¤পদশালার মালিকানাধীন। বর্তমান অর্থায়ন চুক্তি অনুযায়ী ক্রাউন এস্টেটের সমস্ত লাভ জমা হয় সরকারী কোষাগারে। মোট লাভের ১৫ শতাংশ পান রাণী। রাণীকে দেয়া

এসব অর্থই সভেরেইন গ্রান্টের অন্তর্ভূক্ত। গত বছর রাণীকে দেয়া সভেরেইন গ্রান্টের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৭৯ লাখ পাউন্ড। এর মধ্যে রাণী ৩ কোটি ৫৭ লাখ পাউন্ড খরচ করেছেন। এসব অর্থ ব্যয় হয় স্টাফ বা কর্মীদের খরচ, স¤পদ রক্ষণাবেক্ষণ, গৃহস্থালী খরচ ও অন্যান্য কাজে। এক হিসেবে ক্রাউন এস্টেটের স¤পদ রাণী বা রাজার মালিকানাধীন। কিন্তু তিনি তা বিক্রি করতে পারবেন না।

রাণীর আয়ের আরেকটি উৎস হলো রাজকীয় পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারী কোষাগার থেকে দেয়া বিশেষ অর্থ। এ অর্থ মূলত আসে রাণীর মালিকানাধীন ‘ডাচি অফ ল্যাঙ্কাসটারে’র জমি ও স¤পদ থেকে। এসব ক্রাউন এস্টেট পৃথকভাবে পরিচালনা করে। ডাচি অফ ল্যাঙ্কাসটারের আওতাধীন প্রায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ১৮৪৫৪ হেক্টর বাণিজ্যিক, কৃষি ও আবাসিক জমি রয়েছে রাণীর। এটিও রাণীর ব্যাক্তিগত স¤পদ, কিন্তু তিনি তা বিক্রি করতে পারবেন না। এ অর্থও চলে যায় সরকারী কোষাগারে। সেখান থেকে কিছু শতাংশ অর্থ রাণীর খরচের জন্য দেয়া হয়। এ অর্থ সভেরেইন গ্রান্টের আওতাভুক্ত নয়।

এ বছর রাণীর ব্যাক্তিগত আয় ছিল ১ কোটি ৩৩ লাখ পাউন্ড। এ অর্থের বিশাল অংশই এসেছে ল্যাঙ্কাস্টারের স¤পদ থেকে। ‘ডাচি অফ কর্নওয়েল’ নামের আরেকটি তহবিলের আয় থেকে প্রিন্স অফ ওয়েলস ও দ্য ডাচেস অফ কর্নওয়েলের ব্যাক্তিগত ও আনুষ্ঠানিক ব্যয় নির্বাহ হয়। এগুলোর উভয়ই করমুক্ত। কেননা, এসবও ক্রাউন এস্টেটের অন্তর্ভূক্ত।

রাণীর ব্যাক্তিগত আয়ের ব্যাপ্তি খুব কমই জানা আছে। সানডে টাইমসের মতে, রাণীর একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আছে। বিভিন্ন বৃটিশ কো¤পানিতে থাকা রাণীর শেয়ারের পরিমাণ ১১ কোটি পাউন্ড। এছাড়া নোরফোকে স্যান্ড্রিঘাম হাউজ, আবেরডিনশায়ারে বালমোরাল প্রাসাদ সহ আরও ছোটবড় বিভিন্ন বাড়ি রাণীর ব্যাক্তিগত স¤পত্তি।

এর বাইরে রাজকীয় স্ট্যা¤পস সংগ্রহ, চিত্রকলা, অলঙ্কার, গাড়ি, ঘোড়া সহ অন্যান্য অনেককিছুর মালিক তিনি। তবে এসবের কিছু আবার রাজকীয় স¤পত্তির অংশ। এরকম ১০ লাখেরও বেশি সামগ্রীর মূল্য প্রায় ১০০০ কোটি পাউন্ড। কিন্তু এসবের মালিক রাণী নন। তিনি এসবের ট্রাস্টি।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024