শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:০২

রোজায় নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে

রোজায় নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে

মোছাব্বের হোসেন: রোজার ঠিক আগে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছিল, এখন তা আরও বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেওয়া দাম থেকেও বেশি মূল্যে বিক্রেতারা পণ্য বিক্রি করছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, পণ্যের সরবরাহ কম; তাই দাম বাড়তি।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, কাচা মরিচ, বেগুন, পেঁয়াজ ও বিভিন্ন ধরনের ডালের। রোজার দুই দিন আগে বেগুনের কেজি ছিল ৪০-৫০ টাকা। কিন্তু তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা দরে। কারওয়ান বাজারের বেগুন বিক্রেতা মো. সাদ্দাম হোসেনের দাবি, বন্যার কারণে খেতের বেগুন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কম আর দামও বেশি।

রোজার ঠিক আগে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছিল, এখন তা আরও বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। ছবিটি রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা। ছবি: জাহিদুল করিমকাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। রোজার আগে কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৩০-৪০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা দরে। একইভাবে ধনেপাতা রোজার আগে কেজি ছিল ১০০-১২০ টাকা, এখন ৩০০ টাকা। পুদিনাপাতা রোজার আগে ছিল ৮০ টাকা আর এখন ২৫০ টাকা।

হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা মাইজা মিয়াও এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেশজুড়ে বন্যার কথা বললেন। তিনি বলেন, যেই সকল জায়গা থাইক্যা ধইন্না পাতা, পুদিনাপাতা, মরিচ বেশি আহে, সেইখানে অখন বানের পানি। আবাদ ডুইবা গেছে। হের লাইগা মাল কম, দাম বেশি। কাঁঠালবাগানের কাঁচা তরকারি বিক্রেতা আলম মিয়াও দেখালেন একই যুক্তি।

এই বাজারের নিয়মিত ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী ফরহাদ আহমেদ বলেন, রোজার শুরুতে একদফা দাম বেড়েছিল। এক সপ্তাহ বাদেই আবার বেড়েছে। সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেওয়া দাম থেকেও বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, যেসব পণ্যের দরকার বেশি শুধু বেছে বেছে সেগুলোরই দাম বেড়েছে।

ছোলা রোজার আগে প্রতি কেজি ছিল ৫০-৫৫ টাকা, এখন ৬৫ টাকা। খেসারির ডাল আগে ছিল প্রতি কেজি ৪৮-৫০ টাকা, এখন তা ৬০ টাকা। এ ছাড়া বেসনের দাম ৬৫ থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, মসুরের দেশি ডাল ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১২৫ টাকা হয়েছে। কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদার আবুল কালাম জানালেন, রোজার আগে সব ধরেন ডালের দামই বেড়েছে।

হাতিরপুল বাজারে সিটি করপোরেশনের দেওয়া মূল্য তালিকার সামনেই দোকান পেতেছেন কয়েকজন। এতে মূল্য তালিকা ঠিকভাবে দেখাই যাচ্ছে না। কাছে গিয়ে দেখা গেল, তালিকার দামের সঙ্গে বাস্তবের দামের বেশ গরমিল আছে। তালিকায় দেশি পেঁয়াজের দাম লেখা আছে ৪০-৪৫, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম লেখা আছে ৪৩ থেকে ৪৫, অথচ বাজারে দাম ৪০ টাকা। বেগুন লেখা ৪০-৬০, বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আলু লেখা ১৮-২২ টাকা, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা দরে।

কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করেন, এই মূল্য তালিকাটি এমন দায়সারা গোছের লেখা যে অনেক লেখা বোঝাই যাচ্ছে না। একইভাবে কারওয়ান বাজারের দেওয়া মূল্য তালিকাতে দাম দেওয়া আছে এক রকম, কিন্তু বাজারে দাম আরও বেশি।

রোজা শুরুর পর আগের তুলনায় বেশি বেড়েছে ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, কাচা মরিচ, বেগুন, পেঁয়াজ ও বিভিন্ন ধরনের ডালের দাম। ছবিটি রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা। ছবি: জাহিদুল করিমরোজার আগে গরুর মাংস ছিল প্রতি কেজি ৩৬০-৩৮০ টাকা। কিন্তু এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। হাতিরপুল বাজারে মাংস বিক্রেতা মো. সিদ্দিকের দোকানে মাংস নিতে এসেছেন ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা তাহমিদ খান। তিনি বললেন, মাংসের দাম বেড়েই চলছে। অথচ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বাজারের প্রতি কোনো নজরদারি নেই। একবার বেড়ে গেলে তার দাম আর কমে না।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী দাবি করেন, প্রতিদিন মূল্য তালিকা হালনাগাদ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাজারের দামের সঙ্গে মূল্য তালিকার মিল না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের পক্ষে সব সময় এক জায়গায় বসে থেকে দাম দেখা সম্ভব নয়। এটা ক্রেতাদেরই উচিত মূল্য তালিকা দেখে বাজারে ঢোকা। সে ক্ষেত্রে দাম বেশি দেখে যদি আমাদের অভিযোগ করে, তাহলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024