রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:২৩

কমছে অরক্ষিত সীমান্ত

কমছে অরক্ষিত সীমান্ত

জেসমিন পাপড়ি: নতুন ৬৫টি বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট বা বিওপি স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্ত এলাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) নজরদারিতে আনা হচ্ছে। চোরাচালান, অবৈধ প্রবেশসহ সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের অরক্ষিত সীমান্ত কমিয়ে আনার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সারাদেশের ৫৩৯ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত ছিল। কিন্তু গত এক বছরে বিজিবির তৎপরতায় দুই দেশের সঙ্গে ১১০ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে বিজিবির সরাসরি তত্ত্বাবধানে নেই এমন সীমান্ত এখন ৪২৯ কিলোমিটার। এসব অরক্ষিত সীমানার বেশিরভাগই দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। যেখানে পৌঁছানো খুব কষ্টসাধ্য।

জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এখনো অরক্ষিত সীমানা আছে ২৮১ কিলোমিটার। আর মায়ানমারের সঙ্গে আছে ১৪৮ কিলোমিটার। এর কিছু এলাকা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মধ্যে। বিজিবির নজরদারির বাইরে হওয়ায় রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এলাকার এসব সীমান্তে কী কী ঘটে তা জানা নেই তাদের। অবশ্য ওপারে ত্রিপুরা, আগরতলা, মিজোরামের সীমান্তবর্তী এসব এলাকার কোথাও কোথাও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের নজরদারি জোরদার রেখেছে।

এসব অরক্ষিত সীমান্ত প্রসঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অরক্ষিত সীমান্তগুলো নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। গত এক বছরে ১১০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন বিওপি বসিয়ে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। বাকি ৪২৯ কিলোমিটার সীমান্তে নতুন ৬৫টি বিওপি স্থাপনের কথা ভাবছে বিজিবি। এসব অরক্ষিত এলাকায় আজো কেউ পৌঁছুতে পারেনি। তবে নিজেদের দেশের স্বার্থে সেসব এলাকায় পেট্রোলিং বাড়ানো হবে।

সূত্র মতে, মায়ানমারের সঙ্গে অরক্ষিত সীমানা দিয়ে রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। এসব এলাকার অনেকটাই বিজিবি’র নজরদারিতে আনা হলেও কিছু এলাকা এখনো নজরদারিতে আনা সম্ভব হয়নি। নদী আর পাহাড়ি দুর্গম পথ হওয়ায় সেসব স্থানে যাওয়া খুব কষ্টকর।

ভারতের সঙ্গে অরক্ষিত সীমানা বেশি হলেও মায়ানমারের সঙ্গে থাকা অরক্ষিত সীমানা নিয়ে বেশি চিন্তিত বাংলাদেশ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) কর্তৃক নায়েব রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং এর নেপথ্যে থাকা ইয়াবা চোরাচালানের বিষয়টি ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে। এছাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা নিয়েও চিন্তিত সরকার। তারা যে কোনোভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রুখতে বদ্ধ পরিকর।

গত ১৭ জুন টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদীতে গোলাগুলির পর বিজিবি সদস্য রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যায় বিজিপি। ওই ঘটনায় বিপ্লব কুমার নামে একজন সিপাহী গুলিবিদ্ধ হন। নানা দেনদরবার শেষে আট দিন পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ফেরত দেওয়া হয়।

বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মায়ানমার থেকে বিপুল পরিমান ইয়াবা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ সীমান্তে টহল জোরদারে বেশ কয়েক দফায় বিরাট সংখ্যক ইয়াবা চালান ধরে পড়ে। যার জের ধরে বিজিপি অনেকটা পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই রাজ্জাক ধরে নিয়ে যায়।

এছাড়া ভারত সীমান্ত দিয়েও মাদক, জালটাকাসহ বিভিন্ন ধরনের চোরা কারবারের ঘটনা ঘটছে। বিজিবির সেসব কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক।

মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, বিজিবির আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইয়াবাসহ সবধরনের মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। গত একমাসে বিজিবির হাতে ধরা পড়েছে এক লাখ ৬৩ হাজার নয়শ ১৫ পিস ইয়াবা, এছাড়া ৮৭৯ কেজি গাজা, ৩৯ হাজার নয়শ ৫০ বোতল ফেন্সিডিলের চালান, দেড় কোটি টাকার হেরোইন, ৮১ কোটি টাকার থান কাপড়, ২০ হাজার ৬০২ কোটি পিস শাড়ি, এক লাখ ৫০ হাজার দুইশ ৬৮টি ভায়াগ্রা ট্যাবলেট প্রভৃতি। এসবই সীমান্তে প্রতি মুহূর্তে বিজিবির সতর্ক থাকার ফল।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024