শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: আরএএফ টরনাডো জেট সিরিয়াতে কথিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে প্রথম বারের মত বিমান হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ খবর নিশ্চিত করে বলছে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে আইএসের দখলে থাকা এমন ছয়টি স্থানকে লক্ষ্য করে এই হামলা করা হয়েছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সামরিক অভিযানের অনুমতি দেওয়ার পরপরই সাইপ্রাসে যুক্তরাজ্যের বিমানঘাঁটি আরএএফ আক্রোটিরি থেকে চারটি যুদ্ধবিমান সিরিয়ার আইএসের অবস্থানে হামলা চালায়।এর মধ্যে দুইটি বিমান ঘাঁটিতে ফেরত এসেছে।প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে প্রথম বারের মত তারা আক্রমণাত্মক অভিযান করলো সিরিয়াতে।
সিরিয়ায় আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর উপর বিমান হামলা চালাতে বুধবার প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দেয়া প্রস্তাবের উপর হাউজ অব কমন্সে ১০ ঘণ্টা আলোচনা হয়।এরপর ভোটাভুটিতে হামলার পক্ষে ৩৯৭জন এমপি অবস্থান নেন। বিপক্ষে ভোট পড়ে ২২৭টি।এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছিলেন, ব্রিটেনে আইএস জিহাদিদের হামলার জন্য অপেক্ষা না করে লড়াইটা আইএসের কাছে নিয়ে যাওয়াটাই ভাল হবে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সামরিক অভিযানের অনুমতি দেওয়ার পরপরই সিরিয়ায় আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সাইপ্রাসে যুক্তরাজ্যের বিমানঘাঁটি আরএএফ আক্রোটিরি থেকে কয়েকটি যুদ্ধবিমান সিরিয়ার আইএসের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে।
তবে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ কয়টি বিমান এবং কোথায় কোথায় এ হামলা চালানো হয়েছে তা বলতে অস্বীকার করেছে সূত্রটি। এর আগে বিবিসি জানিয়েছিল, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিমান হামলা অনুমোদিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সাইপ্রাসের বিমানঘাঁটি থেকে চারটি যুদ্ধবিমান উড়ে যায়। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’টি বিমান ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
ছেড়ে যাওয়া বিমানগুলো ছাড়াও ঘাঁটিতে আরও চারটি যুদ্ধবিমানকে প্রস্তত রাখা হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছিল। সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীর উপর বিমান হামলা চালাতে বুধবার প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দেয়া প্রস্তাবের উপর হাউজ অব কমন্সে ১০ ঘণ্টা আলোচনা হয়। এরপর ভোটাভুটিতে হামলার পক্ষে ৩৯৭জন এমপি অবস্থান নেন। বিপক্ষে ভোট পড়ে ২২৭টি।
লেবার পার্টির ৬৬জন এমপি বিমান হামলার পক্ষে ভোট দিলেও বাকিরা এ অনুমোদনকে মস্তবড় ভুল আখ্যা দিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতা করবিন ভোটের আগেই ক্যামেরনের এ যুদ্ধ প্রস্তাব ধোপে টেকে না বলে মন্তব্য করেছিলেন।
বিমান হামলা অনুমোদন করায় পার্লামেন্টের এমপিদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন বলেছেন, যুক্তরাজ্যকে নিরাপদে রাখতে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড এমপিদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, কেবলমাত্র বিমান হামলা করেই সিরিয়াকে সাহায্য করা যাবে না, দায়েশ (আইএস) এর হাত থেকেও নিরাপদ থাকা যাবে না। প্রয়োজন বহুমুখী পদক্ষেপ, যার সূচনা হলো আজ।
দলীয় বাধ্যবাধকতা না থাকায় ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেনসহ লেবার পার্টির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ক্যামেরনের পক্ষে অবস্থান নেন। বেন ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) শয়তান আখ্যা দিয়ে বলেন, তারা (আইএস) গণতন্ত্রকে হুমকির মধ্যে ফেলছে। এসময় কনজারভেটিভ দলের এমপিরা করতালি দিয়ে তাকে সমর্থন জানান।
সাবেক মন্ত্রী এলান জোন্স, ওয়াইভেটে কুপার এবং মার্গারেট বেকেট প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য দেন। পার্লামেন্টের ডেপুটি লিডার টম ওয়াটসন এবং কনজারভেটিভ দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান হ্যারিয়ট হারমানও বিমান হামলার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
লেবার পার্টির সাবেক প্রধান এড মিলিব্যান্ডসহ দলটির মোট ১৫৩জন এমপি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন এমপি রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হকও রয়েছেন। কনজারভেটিভ দলের ৭জন সদস্যও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। পার্লামেন্টের তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) ৫৪জন এমপিও ক্যামেরনের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিমান হামলার প্রস্তাবকে হতাশাজনক উল্লেখ করে দলটি বলেছে, এর ফলে ইরাক ও লিবিয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
দলের বেশিরভাগ এমপি ও ছায়া মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়ায় লেবার পার্টিতে করবিনের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে বিবিসি জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী ডায়ানে এবোট বিবিসিকে বলেন, যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় করবিন প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন, কেননা খুব দ্রুতই জনগণ ক্যামেরনের যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আইএসের উপর ব্রিটিশ বিমান হামলা চালানোর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও রাশিয়া।