রবার্ট ফিস্ক, বৃটেনের দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি: মিশরে কি হচ্ছে? মৃতদের কি সন্ত্রাসী বলে ডাকা হবে। ইসরায়েল তাদের শত্রুদের এ নামেই ডেকে থাকে। মার্কিনিরাও তাই। মিশরের মিডিয়া একে অভিহিত করেছে সংঘাত হিসেবে। যেন সশ¯্র মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যরা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। কেন এত মৃত্যু? কে তাদের হত্যা করছে।
মিশরে অনেক মুরসী বিরোধী লোক আছেন যারা আমাকে বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন না ব্রাদারহুডের সদসর্যরা অস্ত্র হাতে সংঘাতে লিপ্ত। যদিও এক বাদ্রারহুড সদস্যকে আমি মেশিনগান হাতে দেখেছি। কিন্তু সত্য হলো এটা যে পুলিশ নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি করেছে। এবং একজন পুলিশও মারা যায়নি। এটা নির্ঝলা গণহত্যা। এর জন্য অন্য কোন শব্দ নেই। এবং আমাদের প্রিয় (বৃটেনের) মন্ত্রী কি বলছেন?
তিনি মিশরীয় কতৃপক্ষকে বলছেন, তারা যেন সংঘাত বন্ধ করে। কারণ এখন সংঘাতের সময় নয়, এখন সংলাপের সময়। গণহত্যার চিত্রটিই বা কেমন? কাপনে মোড়ানো একটি লাশ। কাপনের গায়ে কালো কালিতে লেখা নাম খালেদ আবদুল নাসের। ওই ঘরেই ছিল ৩৭টি লাশ। পুরো ঘরটিতেই রক্তের ছোপ। চিকিৎসকদের পোশাকেও রক্তের দাগ। রাবা মসজিদের পাশের হাসপাতালে কান্নারত নারী-পুরুষের ভীড়। অনেকেই আল্লাহকে ডাকছিলেন। একজন চিকিৎসক আমাকে বললেন, এই মানুষগুলো সূর্যে চলে গেছে। ওরা এখন আল্লাহর সঙ্গে আছে আর আমরা আছি ছায়ার সঙ্গে। সবাই মনে হলো নিষ্ঠাবান বিশ্বাসী। আর মৃত ব্যক্তিরা। তাদের বেশিরভাগেরই গুলি লেগেছে মুখে-বুকে। চরম দুর্দিনে মানুষ যেসব কথা বলে মুসলিম ব্রাদাহুডের সদস্যরাও তাই বলছেন। তারা বলছেন, সামরিক শাসনের অধীন হওয়ার বদলে তারা মৃত্যুকেই বেছে নিবেন।
আর এসব কথা বলা হচ্ছিল সেই দেশে যে দেশে সামরিক অভ্যুত্থানকে সামরিক অভ্যুত্থান বলা যাচ্ছে না। ড. হাবিব বলছিলেন, মৃত্যুর পরেও জীবন রয়েছে। আমি তাকে বলেছিলাম, প্রমাণ দিতে। তিনি বললেন, আমরা পশু নই। সারাটা জীবন কেবল খাদ্য খাওয়া আর পানি পান করা আমাদের কাজ নয়। হাসপাতালে আমাদের মনযোগ ছিল কেবল মৃত মানুষদের দিকে। এত তাজা মৃত্যু যে, তাদের চেহারায় এখনও মৃত্যুর চিহ্ন পড়েনি। একজন চিকিৎসক এশটি লাশের চোখ বন্ধ করতে পারছিলেন না। চোখ বন্ধ করতে আরেকজন চিকিৎসকের সাহায্য চাইলেন তিনি। এটাই হয়তো নিয়ম। মৃত্যুতে আমাদের ঘুমন্ত মানুষের মত দেখাতে হয়। মিশরও হয়তো সেরকম একটা অবস্থাতেই পড়েছে। যেখানে অনেক কিছু থেকেই অনেককে চোখ বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে।
Leave a Reply