নিউজ ডেস্ক: দেশের অন্যতম ইকোপার্ক ও প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডে ভর মৌসুমেও পর্যটক নেই। ইংরেজি ২০১৬ সালকে বিদায় দিতে ও ২০১৭ সালকে বরণ করতে গত ৩১শে ডিসেম্বর ও ১লা জানুয়ারি মাধবকুণ্ডে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম হয়নি। ৪ঠা জানুয়ারি বিকাল পর্যন্ত পর্যটক শূন্যের ধারা অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে।
অন্যান্য বছর যেখানে ২০-২৫ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে, সেখানে এবার ২-৩ হাজার পর্যটক না আসায় পিকনিক স্পটকে ঘিরে মাধবকুণ্ডের ব্যবসায়ীদের দুর্দিন দেখা দিয়েছে। গত ১৫ বছরে মাধবকুণ্ডে এমন ধস নামতে দেখা যায়নি।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা, ঝরনায় ও রাস্তায় ময়লা আবর্জনার স্তূপ, বিভিন্ন স্পট লতা পাতায় ঢেকে থাকা, নোংরা, দুর্গন্ধ, ওপরের পাথর ভেঙে জলপ্রপাতের মূল সৌন্দর্য বিনষ্ট, পর্যটক হয়রানি ইত্যাদি নানা কারণে ভ্রমণ পিপাসুরা মাধবকুণ্ডে বেড়াতে নিরুৎসাহী হচ্ছেন।
সরজমিনে গত বছর যেখানে তিল ধারণের জায়গা খোঁজে পাওয়া যায়নি সেখানে এবার অধিকাংশ স্থান প্রায় ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে। মাধবকুণ্ডে বর্ষবরণের দিন থেকে ৪ঠা জানুয়ারি পর্যন্ত আশানুরূপ পর্যটকের দেখা মেলেনি। মৌলভীবাজারের দরগা মহল্লার মৃত ফারুক আহমদ চৌধুরীর ছেলে যুক্তরাজ্যের নাগরিক ইপু চৌধুরীর সহধর্মিণী স্পেনের নাগরিক এলিজা চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবার মাধবকুণ্ডে আসেন।
ইপু চৌধুরী বলেন, মাধবকুণ্ডের আগের সৌন্দর্য আর নেই। প্রকৃত সৌন্দর্য বিলীন হতে চলেছে। ওপর থেকে পড়া পাথর ঝরনার মূল স্থান ঢেকে রেখেছে। নোংরা আবর্জনায় জলপ্রপাতের পানি দূষিত। রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যটক আকৃষ্টে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় মানুষজন মাধবকুণ্ডে আসছেন না।
মৌলভীবাজার সৈয়দ আবদুল মালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম জানান, দীর্ঘদিনের যাতায়াতের দুর্ভোগ নিরসন ও পর্যটকদের রাত্রিযাপনের সুব্যবস্থা হলেও পর্যটনের স্পটগুলোর বেহাল অবস্থার কারণে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ইকোপার্কের গেইট ইজারাদার মমিন উদ্দিন জানান, গত বছর ৩১শে ডিসেম্বর ও ১লা জানুয়ারি মাধবকুণ্ডে ২০ হাজারেরও বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে। এবার ৪ দিনে ২ হাজার পর্যটকও আসেননি। হোটেল ব্যবসায়ী ইমরান আহমদ জানান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে ঘিরে ১০টি হোটেলসহ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বছরে ৬-৭ দিনের ব্যবসার ওপর সারা বছরের ব্যবসা নির্ভরশীল। এরমধ্যে ৩১শে ডিসেম্বর ও ১লা জানুয়ারি অন্যতম।
কিন্তু এবার এ ৪ দিনে আশানুরূপ পর্যটক না আসায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ব্যবসায়ী এনাম আহমদ জানান, মাধবকুণ্ডে গত ১৫ বছরে এমন পর্যটক মন্দা অবস্থা দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী মাধবকুণ্ডে আগত পর্যটকদের নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। আগত পর্যটকরা গাড়ি পার্কিং ইজারাদারের কর্মচারী, হোটেল ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারীর দুর্ব্যবহার, হামলা, মারধর ও লুটপাটের শিকার হন। অনেক পর্যটক মাধবকুণ্ড বেড়াতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফিরেছেন।
বিশেষ করে দূর-দূরান্তের নারী পর্যটকরা নানা হুমকির সম্মুখীন হন। দীর্ঘদিনের পর্যটক হয়রানির প্রভাবে এবার মাধবকুণ্ডে অন্যান্য বছরের তুলনায় ভ্রমণ পিপাসুরা ভিড় জমাননি। পর্যটক হয়রানির ব্যাপারে প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা কঠোর না হলে মাধবকুণ্ডের প্রতি পর্যটকরা স্থায়ীভাবে নিরুৎসাহী হবেন।