জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই ইউকের বর্ণাঢ্য পুনর্মিলনী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশত ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গ্রেটার লন্ডনের ইলফোর্ডের দ্যা উইলওস ইভেন্টস এ দিনভর আন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই মিলন মেলায় জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আমন্ত্রিত অতিথিদের ভাষণ, সুসাদু মধ্যান্ন ভোজ এবং উপস্থিত এ্যালামনাইদের স্মৃতিচারণের পর গৃহীত এক প্রস্তাবে অস্বচ্ছল পরিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ৫০ জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার সাথে সাথেই প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঋণ খানিকটা হলেও পরিশোধ করার জন্য প্রাক্তণ গ্র্যাজুয়েটরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বৃত্তি স্পন্সর করার জন্য এগিয়ে আসেন। আমন্ত্রিত অতিথিদেরও এগিয়ে আসতে দেখা যায় তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ জনের কাছ থেকে বৃত্তি দেয়ার অঙ্গীকার (কমিটমেন্ট) পাওয়া গেছে। এপ্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই ইউকের আহবায়ক কমিটির সম্পাদক মারুফ চৌধুরী জানিয়েছেন যে, রিইউনিয়নে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি দেয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, পরবর্তীকালে সংগঠনের এজিএম এ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কমিটি বৃত্তি প্রদানের প্রক্রিয়াসহ আরও কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সহায়তা দেয়া যায়, সেসব ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
১০ই সেপেটম্বর রোববার দুপুর ১২টায় দ্যা উইলোজ ইভেন্টস এর বিশাল উন্মুক্ত সবুজ চত্তরে বাংলাদেশের এবং ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে রিউইনিয়েনের উদ্বোধন হয়। এই সময় প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর শহীদউদ্দিন আহমেদ যথাক্রমে বাংলাদেশের এবং ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
রিইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর আহবায়ক ব্যারিষ্টার আনিস আহমদের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক মারুফ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথি সাবেক উপাচার্য প্রফেসর শহীদউদ্দিন আহমেদ, হাই কমিশনরার নাজমুল কাউনাইন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ,বাংলাদেশ থেকে আগত পীর মিসবাউর রহমান এমপি, বিডি নিউজ ২৪ ডট কমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরুজ খালেদী, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, জন ওয়েটথ ব্যারিষ্টার, সিনিয়ার এ্যালামনাই যুগ্ম আহবায়ক হাবিব রহমান, ড. নুজহাত জাহান, শাহগীর বখত ফারুক ও সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক প্রমুখ।
বক্তারা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ও ত্যাগের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তাঁরা যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সাবেক শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান। উদ্বোধনী অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এর আগে অভ্যর্থনা সাব-কিমিটির আহবায়ক দেওয়ান গৌস সুলতান, অর্থ সাব-কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ আবুল কালাম, সাংস্কৃতিক সাব-কমিটির আহবায়ক সিরাজুল বাসিত চৌধরী কামরান, ম্যাগাজিন সাব-কমিটির আহবায়ক তানভীর আহমেদ, আপ্যায়ন সাব-কমিটির আহবায়ক ইসমাইল হোসেইন স্ব স্ব সাব-কমিটির কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
মূল আলোচনা পর্বে রিইউনিয়নের স্পন্সরদের মধ্য থেকে আইকন কলজে অফ টেকনোলজী এ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রিন্সিপাল প্রফেসর নুরন্নবী, এন আর বি ব্যাংকের ইনতিয়াজ আহমেদ এবং বালাদেশ বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
মধ্যাহ্ন ভোজের পর হাবিব রহমানের সভাপতিত্বে এবং শাহানশাহ্্, জেসমিন ও সুপ্রভার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কাহিনী তুলে ধরেন অধ্যাপক আবুল হাশেম, ড. আবদুল হান্নান, রাজিয়া বেগম, মোহাম্মদ আব্দুর রকিব, আবু মুসা হাসান, সৈয়দ এনাম, নিলুফা সৈয়দ, সৈয়দ হামিদুল হক, মেজবাহউদ্দিন ইকো, অজয় রায় রতন, নিলুফা হাসান, ফরিদা কামাল, চৈৗধুরী হাফিজ, বিধান গোস্বামী, মির্জা আসহাব বেগ, ফখরুল ইসলাম মেজবাহ্্, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ব্যারিস্টার, সোহুল আহমেদ মকু, সৈয়দ আবু আকবর আহমেদ ইকবাল, মো: এনামুল হক, মোস্তফা ফারুক, ইহসানুল হক সুমন, রিপা সুলতানা রকিব, সৈয়দ মনসুর আহমেদ, প্রশান্ত লাল দত্ত পুরকায়স্ত, শাহ্্ আকবর আলী, হেমায়েত উদ্দিন খান হিমু, একেএম রবিউল ইসলাম, এসএম মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আলী এবং মোহাম্মদ এ শহীদ প্রমুখ।
স্মৃতিচারণের পর সাবেক শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম চমক ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী মধুদার রেস্তোঁরা। পরিবার-পরিজন এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে তাঁরা হলের পাশে মধুর ক্যান্টিনে খেয়েছেন মিষ্টি-পায়েস, আর পান করেছেন চা-কফি। ছেলে-মেয়েদের জন্য ছিল হাওয়াই-মিঠাই (ক্যান্ডি ফ্লস) ও পপকর্ণ।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল খুবই উপভোগ্য। লন্ডনের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পাশাপাশি এ্যালামনাই এবং তাঁদের ছেলে-মেয়েরাও এতে অংশ নিয়েছে। অনেক সাবেক শিক্ষার্থী গানের তালে তালে দলবেঁধে নাচতেও কুন্ঠাবোধ করেননি। সবাই যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন তাদের সেই পুরনো ক্যাম্পাস জীবনে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিরাজুল বাসিত চৌধুরী কামরার ও রীপা রকিব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরুর আগে স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে তুলে দেয়া হয় সার্টিফিকেট। সাবেক শিক্ষার্থীদের ছেলে-মেয়েরা অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছে।
প্রথম রিইউনিয়নকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘ক্যাম্পাস‘ নামে একটি আকর্ষণীয় ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো: আবদুল হামিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের ভাইস চ্যান্সেলর (সদ্য বিদায়ী) অধ্যাপক আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিকের বাণী রায়েছে। ম্যাগাজিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই ডাকসুর সবচেয়ে জনপ্রিয় সাবেক ভিপি ও ঊনসত্তুরের ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানের নেতা ও বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ভিপি ও বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ডাকসুর সাবেক সাহিত্য সম্পাদক আলী রীয়াজ, বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বাসস এর সাবেক প্রধান সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক এ্যালামনাইর লেখা রয়েছে। আরও রয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৩০০ জন এ্যালামনাইর ডিপার্টমেন্ট ও হল সহ প্রোফাইল এবং ছবি।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই ইউকের যাত্রা শুরু হয়। এরপর গত ৫ জানুযারী যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড়শ‘ সাবেক গ্র্যাজুয়েটদের উপস্থিতিতে গঠিত হয আহবায়ক কমিটি। এর পর থেকেই শুরু হয় প্রথম রিইউনিয়নের প্রস্তুতি। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালূেয়র প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার-পরিজন এবং অতিথি সহ ৭০০ জন রিইউনিয়নে যোগদান করেন।
– প্রেরিত সংবাদ