শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পেয়ে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসতে চাননি, এ কারণে তিনি ছুটিতে যান বলে জানিয়েছেন সুপ্রীম কোর্ট।
শনিবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেওয়া বিবৃতিকে বিভ্রান্তিমূলকও বলা হয়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেছনে। ওই লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক।
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিটি নিচে তুলে ধরা হল-
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ব্যাতিত আপিল বিভাগের অপর পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মো. ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় ওই আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। অপর চারজন অর্থাৎ, বিচারপতি মো, আবদুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচাপরতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার রাষ্টপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তারমধ্যে বিদেশে অর্থপচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, বিচারপতি মো. ইমান আলী ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১ অক্টোর আপিল বিভাগের উল্লিখিত ৫ বিচারপতি এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ওই ১১টি অভিযোগ বিষদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন ওই সকল গুরুতর অভিযোগসমূহ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ওই সকল অভিযোগের ব্যাপের কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকাজ করা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
এতে আরও বলা হয়, এ সিদ্ধান্তের পর ওইদিন (১ অক্টোবর) সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহার অনুমতি নিয়ে ৫ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাসভবনে সাক্ষাত করে অভিযোগসমূহ নিয়ে বিষদভাবে আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে তার নিকট হতে কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের উল্লিখিত ৫ জন বিচারপতি তাঁকে সুষ্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এমতাবস্থায় ওই অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাঁদের (৫ বিচারপতি) পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সুষ্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরের দিন ২ অক্টোবর তিনি তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২ অক্টোবর তিনি উল্লিখিত বিচারপতিদের কোনো কিছু অবহিত না করে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন।
একই সাথে লিখিত ওই বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়াকে প্রধান বিচারপতিদর অনুরুপ দায়িত্ব পালন করতে রাষ্ট্রপতি নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানানো হয়।
এদিন সকাল সাড়ে দশটায় আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এক জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে বিকাল চারটার পর এই বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া ও রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর রয়েছে।