শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল ক্ষুধা, দারিদ্য এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য। কিন্তু শেষ দুই দশকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। এই সময়ে অপুষ্টি, শিশু মৃত্যুর হার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, বেড়েছে সাক্ষরতা এবং জীবনযাত্রার মান। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তার বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। বৃটেনের ফিনান্সিয়াল টাইমসে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘ফ্ল্যউড ওয়ার ক্রাইমস ট্রায়াল পুশ বাংলাদেশ টু দ্যা এ্যাজ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকার জানুয়ারির আগেই যুদ্ধাপরাধের বিচার শেষ করতে চায়। বৃটিশ আইনজ্ঞ এবং যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ লর্ড কার্লাইল মনে করেন, ট্রাইব্যুনালের কারণে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভাগ হয়ে যেতে পারে। সিরিয়া এবং অন্যান্য সঙ্কট নিয়ে ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিশ্বও বাংলাদেশকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। যে কারণে তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার প্রতি আহবান জানিয়েছেন আলোচনায় বসার জন্য এবং সঙ্কটের সুরাহা করার জন্য।
জাতিংসঘের মহাসচিব বান কি মুন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দুই নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। বিএনপি, যে দলটি আগামী নির্বাচনে জয়ের প্রত্যাশা করছে তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অন্য একটি কারণেও আওয়ামী লীগ সরকার দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশ সরকার একজন মানবাধিকার কর্মীকে আটক রেখেছে এবং শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যবসা দখল করার হুমকি দিয়েছে। সম্ভবত রাজনীতিতে তার নতুন ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেই আওয়ামী লীগ তার ওপর খড়গহস্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বেশি নিন্দা হয়েছে যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ট্রাইব্যুনালের রাজনীতিকরণেরই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞরা।
জামায়াতের পক্ষে কাজ করা একজন বৃটিশ আইনজীবী যাকে বলেছেন, পলিটিক্যাল শো ট্রায়াল। এমনকি নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় তবে জয়ীদের সব কিছু নিয়ে নেয়ার নীতির কারণে আশঙ্কা থেকেই যাবে। বিএনপি সরকার আওয়ামী লীগের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারে, আওয়ামী লীগ যেমন গত ৫ বছর বিএনপির ওপর প্রতিশোধ নিয়েছে।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (দেশীয় আদালত, আন্তর্জাতিক নাম থাকা সত্ত্বেও) প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতা এবং সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগে তাকে এ দণ্ড দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত তিনি হচ্ছেন সপ্তম ব্যক্তি। বাকিরা জামায়াতের রাজনীতি করছেন অথবা দলটির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম দেশ বাংলাদেশ-চীন এবং ইতালির সঙ্গে বিশ্বের বৃহৎ গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। যদিও গার্মেন্ট কারখানায় আগুন এবং ভবন ধসের ঘটনায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের খ্যাতি নষ্ট হয়েছে। ভবন ধসে এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক মারা যায়। যদিও রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্জন আজ হুমকির মুখে। বিশেষত বিরোধীদের দমনে, তাদের ফাঁসি দিতে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগের সংকল্পের কারণে বাংলাদেশের অর্জন হুমকির মুখে পড়েছে। ট্রাইব্যুনাল তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।