শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ব্রিটেনের সান্ডারল্যান্ড কারখানায় নয়, নিশানের এক্স ট্রেইল গাড়ির নতুন সংস্করণ তৈরি করা হবে জাপানের কিউশু প্লান্টে।
ব্রেক্সিট নিয়ে চলমান অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নিশানের এ সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছেন ব্রিটেনের রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা, আশংকায় পড়েছেন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও।
১৯৮৬ সাল থেকেই ব্রিটেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প ও বন্দরনগরী সান্ডারল্যান্ড-এ অবস্থিত কারখানায় নিশানের গাড়ি বানিয়ে আসছে। এখানে কর্মরত রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ৭ হাজার কর্মী।
২০১৬ সালে নিশান জানিয়েছিলো, ইউরোপের বাজারের জন্য এক্স-ট্রেইল এসইউভি গাড়ির নতুন ভার্সন তৈরি করা হবে সান্ডারল্যান্ড কারখানায়। তবে তার আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের নিশ্চয়তাও চেয়েছিলো বিশ্বখ্যাত জাপানি গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি।
ব্রেক্সিট চুক্তির পূর্বাপর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে নিশানের উদ্বেগ ছিলো বরাবরই। গতকাল সান্ডারল্যান্ডের বদলে জাপানেই নতুন মডেলের এক্স ট্রেইল নির্মাণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাছে এর ব্যাখ্যা দিয়েছে নিশান কর্তৃপক্ষ।
তারা বলেছে, সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কারণেই এমন একটা সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হয়েছে। ব্রেক্সিটের কারণে একটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বৃটেনের সম্পর্ক কী হবে, তাও অনিশ্চিত। এমন একটা পরিস্থিতিতে বৃটেনকে ঘিরে ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহণ করা কঠিন বলেই নিশান মনে করছে।
এমন কিছু যে ঘটতে পারে, তা কিন্তু আগেই আঁচ করা গিয়েছিলো। কদিন আগেই সোসাইটি অব মটর ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড ট্রেডার্স (এসএমএমটি) জানিয়েছে, ২০১৮ সালে ব্রিটেনে গাড়ি উৎপাদন ছিলো পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের কারণেই গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর মধ্যে আশংকা তৈরি হয়েছে বলে সোসাইটি মনে করে। একই শংকার কথা জানিয়েছে জাগুয়ার, ল্যান্ডরোভার, টয়োটা ও ভক্সহলের মতো জায়ান্ট গাড়ি প্রস্তুতকারি কোম্পানী। তারা বলেছে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট গাড়ির ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সান্ডারল্যান্ড এক্স ট্রেইল প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন শ্রমিক ইউনিয়নগুলো। নতুন কর্মসংস্থান ও নতুন কর্মী সৃষ্টির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা তাদের। যদিও নিশান বলেছে, কেউ চাকুরি হারাবে না।
এক্স ট্রেইল ছাড়া অন্যান্য গাড়ি সান্ডারল্যান্ডের কারখানাতেই বানানো হবে। ব্রিটেনের শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তা স্টিভ বুশ বলেন, নিশানের ঘোষণা সান্ডারল্যান্ড ও উত্তর-পূর্ব ব্রিটেনের জন্যে অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। গোটা যুক্তরাজ্যের অটোমোবাইল সেক্টর একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেলো।
নিশান এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর পরই ব্রিটেনের রাজনৈতিক মহলে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বেশ ক’জন নেতা এই পরিস্থিতির জন্য ব্রেক্সিটকে দায়ী করেন।
ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী গ্রেগ ক্লার্ক এমপি বলেন, নিশানের এই সিদ্ধান্ত মটর সেক্টর ও এই অঞ্চলের জন্য একটি বড়ো ধরনের আঘাত।
লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন টুইটারে বলেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট অনিশ্চতা ও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ফেলছে ব্রিটেনকে।
সান্ডার্যলান্ডের এমপি জুলি এলিয়ট বলেন, সান্ডারল্যান্ড এক্সট্রেইল প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলের অর্থনীতির জন্যে বিধ্বংসী পদক্ষেপ। ব্রেক্সিট নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাকেই এই অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন তিনি।