শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ব্রিটিশ সরকারের কাছে ১২ লাখ পাউন্ড আইনি খরচ দাবি করেছেন দেশটির সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব এরিক পিকলস।
টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেয়র লুৎফর রহমানকে নিষিদ্ধের মামলা চালাতে এই অর্থ ব্যয় করেছিলেন চার আবেদনকারী। এখন সংসদীয় কমিটির কাছে ওই অর্থ দাবি করছেন এরিক পিকলস।
তার দাবি, আবেদনকারীরা জনস্বার্থে ওই মামলা করেছিল। ফলে সরকারকে মামলা পরিচালনার খরচ বাবদ ১২ লাখ পাউন্ড পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ২৯ লাখ ৬১ হাজার ৪০৮ টাকা।
দুর্নীতি বিরোধী প্রচারক অ্যান্ডি এরলামের নেতৃত্বে চার আবেদনকারী ২০১৫ সালে ওই মামলার প্রায় সব খরচ বহন করেছিলেন। লর্ড পিকলস পার্লামেন্টারি সিলেক্ট কমিটির কাছে বলেছেন, সরকার এই চার আবেদনকারীর কাছে যথেষ্ট ঋণী।
তাদের এই অর্থ পরিশোধ করা উচিত। কেননা, আবেদনকারীরা জনস্বার্থে ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু সরকারে থাকার সময়ে আমি ওই যুক্তিতে হেরে গিয়েছিলাম। এই ধরণের মামলার পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত।
ভোট জালিয়াতি মোকাবিলা এবং ভোটকেন্দ্রে হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রস্তাবিত আইন পরীক্ষা করে দেখছে পার্লামেন্টারি সিলেক্ট কমিটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ ধরণের ব্যাপক অনিয়ম হয়। ওই নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন লুৎফর রহমান।
তবে পরের বছর ওই নির্বাচন উচ্চ আদালতে বাতিল হলে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে লুৎফর রহমানের কাছে হেরে যাওয়ার পর নতুন নির্বাচনে জন বিগস এবং লেবার পার্টি সেখানকার ক্ষমতায় ফিরে আসে।
নির্বাচন কিভাবে হওয়া উচিত তা নিয়ে ওই সময়ে একটি পার্লামেন্টারি প্রতিবেদন দাখিল করেন লর্ড পিকলস। সিলেক্ট কমিটিকে তিনি বলেন, সচিব হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটসে যা দেখেছিলাম তার কারণে আমি দুর্নীতিবিরোধী অগ্রগণ্য ভূমিকা নিয়েছিলাম। আমাদের গোড়া থেকেই এটি ধ্বংস করার দরকার ছিল- নির্বাচন ব্যবস্থা নিরাপদ করার প্রয়োজন ছিল।’
মামলা দায়েরকারী অ্যান্ডি এরলামের একটি চিঠি পড়ে শোনান সিলেক্ট কমিটির সদস্য লর্ড ক্যাম্পবেল সেভর। ওই চিঠিতে প্রকাশ করা হয় কিভাবে ক্ষমতাচ্যুত মেয়র অল্প কয়েকদিনের মধ্যে দেউলিয়া হয়ে যান আর মামলা দায়েরকারীদের খরচ হিসেবে ৯০ হাজার পাউন্ড পরিশোধ করেন।
যদিও আদালত আরও পাঁচ লাখ পাউন্ড পরিশোধের নির্দেশ দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, জনস্বার্থে মামলা জিতলেও আবেদনকারীদের পুরস্কার মেলে ১২ লাখ পাউন্ডর আইনি খরচের বিল।
ওই সময়ে সরকার যুক্তি দেখায়, এটি ছিল একটি ব্যক্তিগত বিচারকাজ আর তারা কোনও নজির সৃষ্টি করতে চায় না। লর্ড ক্যাম্পবেল-সেভর বলেন, এই ব্যক্তিরা জনস্বার্থে কাজ করেছে।
এই ধরণের প্রেক্ষাপটে পড়া আবেদনকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি করা সম্ভব কিনা সেই প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি।
বো এলাকায় লুৎফর রহমানের মালিকানাধীন সম্পত্তি আদালত জব্দ করে বিক্রি করে দেওয়ার পর মামলাকারীরা মাত্র ৯২ হাজার পাউন্ড ফেরত পান।
লর্ড পিকলস বলেন, ‘আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কিছু বলছি না। সরকারের আইনি খরচ পরিশোধ করা উচিত। মান্ধাতার আমলের এবং অপ্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা এই ব্যক্তিদের বহু খরচ করিয়েছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের ফল বাতিলের পর নিজের প্রতিবেদনে লর্ড পিকলস নির্বাচনে জালিয়াতি ঠেকাতে পাইলট ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় এই ঝুঁকি রয়েছে সেসব এলাকায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার কথাই ভেবেছিলাম। হস্তক্ষেপের মাত্রা কমিয়ে আনতে নির্বাচনের দিন সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘তরুণদের চিৎকারের মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রের দীর্ঘ করিডোর দিয়ে হেঁটে যাওয়া আর রিটার্নিং অফিসারের চারদিকে মানুষের শোরগোল জুনিয়র কর্মকর্তাদের হুমকিতে ফেলতে পারে।
দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের আইন প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা উচিত। নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এলাকা উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করায় জেরার মুখে পড়েছিলেন লর্ড পিকলস। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ভোট দেওয়ার জন্য আপনার মা-বাবা বা কোনও সম্প্রদায়ের নেতার ওপর ভরসা করা উচিত না।
লর্ড পিকলস বলেন, নিবন্ধন খাতায় আমাদের অনেক ভূতুড়ে ভোটার আছে যাদের আসলে কোনও অস্তিত্ব নেই। তারা হয় মারা গেছে, কোনও অস্তিত্ব নেই বা হয়তো সেখান থেকে চলে গেছে।
২০১৪ সালের টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটার তালিকায় শত শত ভুয়া ভোটার ছিল। তাদের নির্বাচনে জালিয়াতিতে ব্যবহার করা হয়। পোস্টাল ভোটেও জালিয়াতি করা হয়।
পার্লামেন্টের সিলেক্ট কমিটির শুনানির পর অ্যান্ডি এরলাম বলেন, সরকার আমাদের পিঠ চাপড়ে দেওয়ার পর মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। এটা বিরক্তিকর।
আমরা মামলা করেছিলাম কারণ পুলিশ, নির্বাচন কমিশন এবং রাজকীয় বিচার ব্যবস্থা বড় অংকের অর্থ ব্যয় করেও নিজেদের কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। লর্ড পিকলসের সমর্থনকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
তিনি তার সামর্থ্যের সবটা করেছেন। নিজেদের অনুসন্ধানের প্রতিবেদন আগামী বছর প্রকাশ করবে সিলেক্ট কমিটি।