শীর্ষবিন্দু আর্ন্তজাতিক নিউজ: চীনের করোনা ভাইরাসের আরও হাজার হাজার বাহক থাকতে পারে বলে সোমবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হংকংয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ওই ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণের আগেই ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপের আহ্বান জানান তারা। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এটা বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
বুধবার পর্যন্ত চীনে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩২ জনের। আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭৪ জনে। আর মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১০৬ জন আর আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৫১৫ জন। একদিনের ব্যবধানেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। আর মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা।
এছাড়াও রাজধানী বেইজিংসহ ২৯টি প্রদেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। চীন ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কানাডাসহ অন্তত ১৬টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে।
সোমবার হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর এই সপ্তাহেই এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন গ্যাব্রিয়েল লিয়াং ও রোগের বিস্তার বিষয়ক বিশ্লেষক জোসেফ ইউ বলেছেন, চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে ২৫ থেকে ২৬ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হওয়া স্বত্ত্বেও অনেকেরই আক্রান্ত হওয়ার কোনও উপসর্গ দৃশ্যমান হচ্ছে না।
হার্ভার্ড থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া লিয়াং জনসাধারণের চলাচল সীমিতকরণের জন্য কড়াকড়ি আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত এই ভাইরাস ছড়িয়ে অন্যান্য শহরেও বিস্তার ঘটছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে যে এই বিশেষ রোগ বিশ্বব্যাপী মহামারি রুপ ধারণ করতে চলেছে।
ইতোমধ্যে হুবেই প্রদেশের ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আরও ২০ শহরে যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি উহানে আক্রান্তদের জন্য দুইটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ঘোষণা দিয়েছে, তাদের জন্য ১০ হাজার বেড প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ৩ কোটি মানুষের শহর চংকিং হচ্ছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত শহর। তারা সতর্ক করে বলেছেন, উহান পর্যটন কেন্দ্র ও এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় বেইজিং, সাংহাই, শেনজেনের মতো বড় শহরে দ্রুত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
করোনা ভাইরাসের তথ্য গবেষণা করে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে পাঠিয়েছেন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে চীন থেকে ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টির সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণ করছে ডব্লিউএইচও।
মঙ্গলবার বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উয়াং ইই, ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেয়েসাস এ ব্যাপারে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চীনের সক্ষমতার প্রতি আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও’র প্রধান।
সিঙ্গাপুরের ডিউক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের প্রধান ড. লিনফা ওয়াং বলেছেন, ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের বিষয়ে চীনের বর্তমান পদক্ষেপ কাজ করছে কীনা তা নির্ধারণের জন্য আগামী দুই সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়।
তবে তিনি আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়ে অনুমাননির্ভর জল্পনার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের এখন অন্যান্য দেশের প্রতিও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।
ওয়াং বলেছেন, এটা খুবই ইতিবাচক যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সবার সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় বিশ্বব্যাপী রোগ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
এর আগে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের পরিচালক মা জিয়াওওয়াই বলেছেন, রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে কঠিন সময় পার করছে দেশটি।
তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো আমরা।