শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৭

সিলেটীদের আন্তর্জাতিক মিলন মেলা ‘৬ষ্ঠ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন‘ শুরু

সিলেটীদের আন্তর্জাতিক মিলন মেলা ‘৬ষ্ঠ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন‘ শুরু

নিউজ ডেস্ক, ঢাকা / ২৫৪
প্রকাশ কাল: বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১

আবেগ, উচ্ছ্বাস আর বৃহত্তর সিলেটের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিলেটীদের সম্পৃক্ত করার আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ৬ষ্ঠ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন। করোনা সংকটের কারণে বার বার বিলম্বিত হলেও অবশেষে এ সম্মেলনের পর্দা উঠে।

গত ৬ নভেম্বর শনিবার নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় এবং বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৮ টায় ভার্চ্যুয়ালি এ সম্মেলন এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী, সিলেটের কৃতী সন্তান আবুল মাল আবদুল মুহিত। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ব সিলেট ২০২১ এর আহবায়ক ডঃ আহমেদ মুশতাকুর রাজা চৌধুরী।

জাতীয় সংগীত এর মাধ্যমে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর থিম সং পরিবেশন করেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী হিমাংশু গোস্বামী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- বিশ্ব সিলেট সম্মেলন কমিটির সভাপতি সি এম তোফায়েল সামী, জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি ডঃ আব্দুল মবিন, নিউইয়র্কের বিশিষ্ট সমাজসেবী রাহাত নাসরীন ও সৈয়দ জাকী হোসাইন, লিয়াকত হোসাইন এবং যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট সমাজসেবী ইকবাল হোসাইন ওবিই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ব সিলেট সম্মেলন ২০২১ এর মহাসচিব ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্ব সিলেট সম্মেলন কোন প্রতিষ্ঠান নয়. এটি একটি আন্দোলন।তারা বলেন, সারা বিশ্বে সিলেটের ঐতিহ্যকে বুকের মধ্যে ধারণ করার আন্দোলন।বক্তারা আরো বলেন, অনাবাসী সিলেটিরা, যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজেদের অথবা তাদের পূর্বপুরুষের জন্মমাটির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগরূক রেখেছেন, তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় বিনির্মাণ ও বিনিময়ের লক্ষ্যে একত্রিত পরিসরে একটি মিলন মেলা।আর পিছিয়ে পড়া মানুষ ও সমাজকে উন্নয়ন করার জন্য ছড়িয়ে থাকা এই অঞ্চলের মানুষ বা তাদের সংগঠন ও কার্যক্রমের সংযোগ ও সমন্বয় করার একটি উদ্যোগ হচ্ছে এ সম্মেলন।

তারা বলেন, সরকারের যে সব জায়গায় ঘাটতি হতে পারে সেই সব জায়গায় আমরা জেলা ভিত্তিক সেই সবের উন্নতির জন্য একটি কার্যক্রম শুরু করতে চাই। এটি সরকারি, বেসরকারি বা অন্য যে কোনো সংস্থার মাধ্যমে অথবা যৌথভাবে করা যেতে পারে।তারা বলেন, আমাদের বিশ্বাস, এ আয়োজন একটি সফল মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে যে যার অঞ্চল কে উন্নতি করার জন্য সম্পৃর্ক্ত করতে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন এবং তাতে সমস্ত বাংলাদেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান: “মুক্তিযুদ্ধে সিলেট” অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, মেজর জেনারেল ( অব) ইমামুজ্জামান (বীর বিক্রম), মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মুহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার (অব) জয়ন্ত কুমার সেন ও ডাঃ অরূপ রতন চৌধুরী। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ব সিলেট সম্মেলন কমিটির মমহাসচিব কর্নেল (অব) আব্দুস সালাম (বীর প্রতীক)। বক্তারা মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। এ জন্য সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সিলেটের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে একটি যাদুঘর স্থাপনের বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় সিলিটের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক প্রযোজনা। সিলেটের গুনী শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় নৃত্য,আবৃত্তি, একক ও দলীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এ পর্ব সমন্বয় করেন সিলেটের সাংস্কৃতিক সংগঠক বিভাষ শ্যাম পুরকায়স্থ যাদন , আমিনুল ইসলাম লিটন, অধ্যক্ষ শামীমা চৌধুরী, নীলাঞ্জনা জুঁই , মিশফাক আহমেদ মিশু এবং রজত কান্তি গুপ্ত।

সম্মেলনের ২য় দিন ৭ নভেম্বর,রবিবার নিউইয়র্ক সময় সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘সিলেটের শিক্ষাঃ সংকট উত্তরনে ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্টাতা ও উপাচার্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রাক্তন গভর্নর ডঃ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিক্ষাবিদ, এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর এমেরিটাস অধ্যাপক ডঃ মনজুর আহমেদ ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং শিক্ষা আন্দোলনের পুরোধা ব্যাক্তিত্ব রাশেদা কে চৌধুরী। এতে বক্তারা শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেটের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে সরকারের পাশাপাশি দেশ ও প্রবাসের গুনীজনদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। দিনের ২য় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ‘সিলেটের পরিবেশগত সমস্যা ও প্রতিকার’ বিষয়ক। এতে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ পরিৰেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।

এদিন ‘সিলেটের পরিবেশ অবক্ষয় ও মানবিক বিপর্যয়’ সম্ভাবনা’ শীর্ষক আরেকটি আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম এবং হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিলেট পিডিয়ার প্রধান সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শুভ। আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন পর্বে বক্তারা বৃহত্তর সিলেটের নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়, ইতিহাস- ঐতিহ্যেকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাসহ প্রবাসীদের সিলেটের বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত করার উপর গুরুত্বারোপ করা করেন। ভার্চ্যুয়াল এ আয়োজনে অন্তর্জালে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সুধীজনরা যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন বিভিন্ন মন্তব্যের মাধ্যমে তারা সিলেটকে ঘিরে নিজেদের আবেগ তুলে ধরেন। আগামী ১৩ ও ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় সপ্তাহের কার্যক্রম। সম্মেলনে মিডিয়া পার্টনার হিসাবে কাজ করছে উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ‘দেশে বিদেশে’।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2024