শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫১

দেশে করোনার সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি

দেশে করোনার সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি

শীর্ষবিন্দু নিউজ, ঢাকা / ৩৩৮
প্রকাশ কাল: মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২২

ওমিক্রনের কারণে বিশ্বব্যাপী করোনার সুনামি শুরু হয় গত মাসেই। প্রতিবেশী দেশেও ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব চলছে। বাংলাদেশও ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ৭ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে।

দেশে ফের করোনার সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। বেড়েছে মৃত্যুও। এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি। এমন অবস্থায়ও বেহাল স্বাস্থ্যবিধি। তবে এখনো লকডাউন দেয়ার মতো চিন্তা করা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আপাতত চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, মার্চ-এপ্রিলে দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় গতকাল ওমিক্রন ইস্যুতে জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক করেছেন নীতিনির্ধারকেরা। বৈঠকে  আবারো বিধিনিষেধ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

বিধিনিষেধের আওতায় গণপরিবহনে আবার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করার নির্দেশনা আসছে। ভ্যাকসিন নেয়া না হলে রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাবে না। একইসঙ্গে সারা দেশে টিকা কার্যক্রম আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারা দেশে বুস্টার ডোজ দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার আবার প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। শীতের মৌসুম হওয়ায় যত ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান হওয়া সম্ভব, সবই হচ্ছে। বিয়ে, পিকনিক, ঘোরাঘুরি, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে স্থানীয় নির্বাচনও। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, মিছিলগুলোতে অনুপস্থিত থাকছে স্বাস্থ্যবিধি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, আগামী মার্চ-এপ্রিলে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দেশে বড় ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি, মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ কারণে, আমরা সারা দেশের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা জোরদারের জন্য কাজ করছি।

গত বছরের জুন-জুলাইয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ের পৌঁছালে চাহিদার তুলনায় অক্সিজেনের সরবরাহ কম ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ৪০টি হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এই ৪০টি ছাড়াও বিভিন্ন উৎস থেকে আরও কিছু অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি বলেও জানান  স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক। তবে তিনি সঠিক সংখ্যাটি জানাননি।

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের চলাফেরার ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কেউ গণপরিবহনে উঠতে পারবে না। শুধুমাত্র করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণকারীরা অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট, শপিং মলে প্রবেশ করতে পারবে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে লোক সমাগম সীমিত করা হবে। গণপরিবহনেও আসন সংখ্যা সীমিত করা হবে। খুব শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে। সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য জানান।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে ওমিক্রন মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। টিকা কার্যক্রম চালু আছে। আমাদের ২০ হাজার বেড সবই রেখে দিয়েছি। ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত কীভাবে করোনার চিকিৎসা করতে হয়। দেশবাসীও এই বিষয়টি জানে।

আশংকার কথা হচ্ছে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। আজকেও ৩.৪ শতাংশ সংক্রমণ হার। মৃত্যুহার যদিও কম আছে। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে লকডাউনের চিন্তা আসবে। আবারো স্কুল-কলেজ নিয়ে চিন্তা আসবে।

কী কী বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের পরিবহনের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা থাকবে কীভাবে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের ল্যান্ডপোর্ট, সিপোর্ট, এয়ারপোর্ট যেগুলো আছে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো এবং আরও মজবুত করা হবে। আমরা এন্টিজেন টেস্ট করছি, পিসিআর টেস্টও করছি এবং কোয়ারেন্টিনের জন্য আরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। কেউ আক্রান্ত থাকলে তাদের যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা।

বিশেষ করে পুলিশ পাহারায়  কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, যত অনুষ্ঠান আছে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যাতে সংখ্যা যেন সীমিত করা হয় সে বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে পজেটিভ আলোচনা হয়েছে যে এটা করা হবে। পরিবহন সেক্টরে বলা হয়েছে যে, তাদের যে সিট ক্যাপাসিটি আছে সেই ক্যাপাসিটি কমিয়ে যেন চালানো হয় এই বিষয়ে একটা আলোচনা হয়েছে।

আশা করি, এই বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত পাবো। দোকানপাটে গেলে, বাসে-ট্রেনে উঠলে, মসজিদে গেলে মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে। আরেকটি তাগিদ দেয়া হয়েছে টিকা যেন গ্রহণ করে। টিকা যারা গ্রহণ করেছে তারা রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে, অফিসে যেতে পারবে, বিভিন্ন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে মাস্ক পরা অবস্থায়। কিন্তু টিকা যদি না নিয়ে থাকে তারা কিন্তু রেস্টুরেন্টে যেতে পারবে না। যদি এমন কাউকে পাওয়া যায় তবে ওই রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হবে। এ জন্য পনেরদিন সময় দেয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি হবে।

লকডাউন বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনাএ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লকডাউনের সুপারিশ এখনো করিনি। পরিস্থিতি এখনো হয়নি। ওই পর্যায়ে যেন যেতে না হয়। এখন আমরা জোর দেবো প্রতিরোধের দিকে। ওমিক্রন বা করোনা প্রতিরোধের জন্য যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ দরকার সেগুলো আমরা করছি। লকডাউনের বিষয়টি পরে দেখা যাবে।

বিমানের ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিমানে যারা ওঠেন তারা অনেক পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে ওঠেন। নতুন কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলিনি। তারা যেন মাস্ক ব্যবহার করেন এবং টিকা নেন সে বিষয়টি নজরদারি জোরদার করা হবে, নিশ্ছিদ্র করা হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকবে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা টিকা দেয়ার বিষয়ে ঢিলেঢালা ভাব আছে। আমরা সহযোগিতা করবো। আমরা আহ্বান করছি তাড়াতাড়ি টিকা দেয়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে ৮৫২টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ হাজার ৭৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১৯ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।  নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩ দশমিক  ৩৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে ১ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারী। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৭ হাজার ৯৬০ জন এবং নারী ১০ হাজার ১২১ জন।  তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২  জন,  ৭১ থেকে ৮০ বছরের ১ জন,  ৬১ থেকে ৭০ বছরের ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন,  খুলনা বিভাগের ১ জন বাসিন্দা রয়েছেন। মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩ জন মারা গেছেন।

দেশে ফের প্রতিদিনই দৈনিক করোনার শনাক্ত  বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগের দিন ছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ হাজার ৮১ জনে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬৭৪ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৪০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৪ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

বিশ্বজুড়ে ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচএ)। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন সংস্থাটি। এ পরিস্থিতিতে দেশে স্বাস্থ্যবিধি উধাও। ওমিক্রন নিয়ে প্রস্তুতিও খুবই ঢিলেঢালা। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই সংক্রমণ ও শনাক্তের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই করোনার শনাক্ত বাড়ছেই। ফের দৈনিক শনাক্ত পৌনে ৭ শ’তে পৌঁছেছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
All rights reserved © shirshobindu.com 2024