আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অধিকারী রাসুল ’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইমাম মাওলানা নুরুর রাহমান।
চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। এটি তলোয়ারের চেয়েও তীক্ষ্ণ হয়ে মানব জীবনে ধ্বংস ও উন্নতির সোপান হিসাবে কাজ করে। সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিত্ব সকলের নিকট সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সে ধরণের উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এক মহা মানব।
বাল্যকালেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কাওম কর্তৃক ‘আস সাদিক’ বা সত্যবাদী উপাধিতে ভূষিত হন। আমানতদার, দৃঢ়তা, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, সাধুতা, স্বভাবগত চারিত্রিক মাহাত্ম্য প্রভৃতি গুণে তিনি গুণান্বিত ছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর মর্যাদাকে জাহেলী সমাজেও সুউচ্চ করে দিয়েছেন। জাহিলিয়াতের নাপাক ও খারাপ অভ্যাসসমূহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে স্বজাতির নিকট সবচেয়ে বেশি প্রশংসনীয় গুণাবলী, উন্নত মনোবল, লাজ নম্র ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তিনি। কিশোর বয়সের সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, নম্রতা ও ভদ্রতা, নিঃস্বার্থ মানবপ্রেম ও সত্যিকার কল্যাণ প্রচেষ্টা, চরিত্র মাধুর্য ও অমায়িক ব্যবহারের ফলে আরবগণ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়। অবশেষে আরবগণ তাঁকে আল-আমিন বা বিশ্বস্ত বলে ডাকতে থাকে।
ফলে মুহাম্মাদ নাম অন্তরালে পড়ে গিয়ে তিনি আল-আমিন নামে খ্যাত হয়ে উঠলেন। নীতিধর্ম বিবর্জিত, ঈর্ষাবিদ্বেষ কলুষিত, পরশ্রীকাতর দুর্ধর্ষ আরবদের অন্তরে এতখানি স্থান লাভ করা ঐ সময়ে খুবই কঠিন ছিল। অনুপম চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী হওয়ার কারণেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছিল। এমনকি তারা বিভিন্ন জটিল বিষয়াদি মীমাংসার ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত কামনা করত। কুরাইশ বংশের সকল গোত্রে কাবাগৃহে হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে যে তীব্র বিতণ্ডা ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আশংকা দেখা দিয়েছিল তাও তিনি যুক্তিপূর্ণ উপায়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে মীমাংসা করেছিলেন।
এভাবে তিনি সর্বজনবিদিত ও নিরপেক্ষ একজন বিচারকের মর্যাদায় আসীন হন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র মাধুর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤﴾ [القلم: ٤] ‘‘নিশ্চয় আপনি উত্তম চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’’ [সূরা আল-কলম, আয়াত: ৪]
মূলতঃ তাঁর চরিত্র হলো পবিত্র কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তাঁর গোটা জীবন কাহিনী তথা সীরাত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁর চরিত্রে ছিল ভীতিজড়িত বিনয়, বীরত্ব ও সাহসিকতা মিশ্রিত লজ্জা, প্রচার বিমুখ দানশীলতা, সর্বজনবিদিত আমানতদারী, বিশ্বস্ততা,কথা ও কাজে সত্য ও সততা। পার্থিব ভোগ-বিলাস থেকে সম্পূর্ণ বিমুখতা, নিষ্ঠা, ভাষার বিশুদ্ধতা ও হৃদয়ের দৃঢ়তা, অসাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা, ছোট-বড় সকলের প্রতি দয়া ও ভালবাসা, নম্র আচরণ, অপরাধীর প্রতি ক্ষমা প্রিয়তা, বিপদাপদে ধৈর্য ও সত্য বলার দুর্বার সাহসিকতা। তাঁর প্রিয় সহধর্মিণী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার দৃষ্টিতে كان خلقه الفرآن ‘‘পবিত্র কুরআনই ছিল তাঁর চরিত্র।’’
Leave a Reply