এবার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া পুরান ঢাকার পোস্তায় যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত প্রস্তুতির পরও অধিকাংশ কাঁচা চামড়া চলে যাচ্ছে সাভারের হেমায়েতপুর ট্যানারি পল্লিতে।
এদিকে বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনছেন সাভারের ট্যানারি ও পোস্তার আড়তদাররা। গত রবিবার বিকাল থেকে ট্যানারিগুলোতে ট্রাকে চামড়া আসা শুরু হয়।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছর কোরবানির চামড়া-কেন্দ্রিক নৈরাজ্যের যে নমুনা দেশের মানুষ দেখেছে, এবার এখন পর্যন্ত তেমন কোনও শঙ্কা নেই।
এবার পোস্তায় চামড়া এনে কোনও বিক্রেতাকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সরেজমিন দেখা গেছে, কেউ চামড়া নিয়ে আসামাত্র ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিরা ওই চামড়া সংগ্রহের জন্য তোড়জোড় করছেন। অন্যদিকে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে যাওয়া শুরু করেছে কোরবানির পশুর চামড়া। এতে বেড়েছে সেখানকার শ্রমিকদের ব্যস্ততা।
এরপরই শ্রমিকরা আকারভেদে চামড়া বাছাইয়ের পর লবণজাত করে ট্যানারির গুদামে সংরক্ষণ করছেন। এবার গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে ৭ টাকা আর খাসির চামড়ার দাম ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
সরকার এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারী ও আড়তদারেরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ইতোমধ্যে চামড়া কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা তাদের দিয়েছি। গত দুই বছরের তুলনায় চলতি বছর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, কেনাবেচা ভালো হবে।
চামড়া শিল্প নগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ১৩৯টি ট্যানারি এবার কাঁচা চামড়া নিচ্ছে। আমাদের সব ট্যানারি এবার চামড়া নেওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
ঈদের দিন বিকাল থেকেই চামড়া আসতে শুরু করেছে। এদিকে অর্থের জোগান আর লবণ আমদানি, দু’দিকেই আগে থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন পোস্তার আড়তদাররা।
কিন্তু সেই তুলনায় সেখানে যাচ্ছে না চামড়া। এ ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক চামড়া ক্রয়ের অস্থায়ী ব্যবস্থাকেই দুষছেন তারা। এদিকে স্বস্তির খবর শুনিয়েছে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
তারা বলছেন, চামড়া নষ্ট হওয়ার কোনও সুযোগ নেই এবার। তারা বলেন, পোস্তার কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা গত বছরের তুলনায় এবার চামড়াপ্রতি অন্তত গড়ে ১০০ টাকা বেশি দামে কিনছেন।
কোভিড মহামারির দুই বছরে কোরবানির ঈদে চামড়ায় দাম না পেলেও ঢাকায় এবার একটু বেশি দামে চামড়া কিনছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী বা ফড়িয়ারা। নারায়ণগঞ্জ থেকে চামড়া নিয়ে এসেছেন এক মৌসুমি ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ১০০টি চামড়া নিয়ে এসেছি। গড়ে ৭০০ টাকা বিক্রি করছি। গত বছর ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।
পোস্তার আড়তে গতবারের চেয়ে বেড়েছে কাঁচা চামড়ার দাম। রবিবার বড় আকারের প্রতিটি চামড়া ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ছোট ও মাঝারি আকারের চামড়া ৪০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত বছর যা ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
পোস্তার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এখন বেশিরভাগ কাঁচা চামড়া সরাসরি সাভারের হেমায়েতপুরে যাচ্ছে। এ কারণে পোস্তায় কাঁচা চামড়া আসা কমে গেছে। ৩০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করা আশরাফ আলী জানালেন, ব্যবসা এখন ট্যানারি মালিকদের হাতে। এখন পোস্তায় আগের মতো আর চামড়া আসে না। অনেক চামড়া সরাসরি ট্যানারিতে চলে যায়। তিনি উল্লেখ করেন, আগে হাজার হাজার ফড়িয়া আসতো, এখন আর আসে না। কারণ, ফড়িয়াদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই এবং তারা সরাসরি ট্যানারি মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, এ বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনছেন ট্যানারি মালিকরা। এছাড়া এ বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর চামড়ার লোকসান দিয়ে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। অর্থ সংকটে অনেক ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন না।
উল্লেখ্য, এ বছর কোরবানি থেকে চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা প্রায় ৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা করছেন। কোরবানির দিন বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা পশুর চামড়া সংগ্রহে নেমে পড়ে। ঢাকায় কোরবানির পশুর চামড়ার অধিকাংশই এসব প্রতিষ্ঠানে দান করে দেওয়া হয়। পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল আজহা। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়, তার ৬০ শতাংশই হয় ঈদুল আজহায় কোরবানির মাধ্যমে।
Leave a Reply