বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৪

মৃত স্বামীর কণ্ঠ শুনতে প্রতিদিন রেল স্টেশনে যান এই ব্রিটিশ নারী

মৃত স্বামীর কণ্ঠ শুনতে প্রতিদিন রেল স্টেশনে যান এই ব্রিটিশ নারী

শীর্ষবিন্দু নিউজ, লন্ডন / ১৬৯
প্রকাশ কাল: বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শীত হোক বা বর্ষা, মার্গারেটের রোজকার পঞ্জি যেন বদলায় না। রোজ তিনি যান লন্ডনের এমব্যাঙ্কমেন্ট মেট্রো স্টেশনে। বসে শোনেন তার স্বামীর কণ্ঠস্বর।

এই দুনিয়ায় প্রেমের গল্প কম নেই। কিন্তু মার্গারেট ম্যাকালামের গল্পটা একেবারেই আলাদা। স্বামীকে চোখের দেখাও দেখতে পান না প্রায় ১৬ বছর। তবু রোজ তার কণ্ঠস্বর শুনবেন বলে ছুটে যান একই জায়গায়।

 ২০০৭ সালে মারা যান মার্গারেটের স্বামী। কিন্তু ওই স্টেশনে থেকে গিয়েছে তার কণ্ঠস্বর। মার্গারেটের স্বামী অসওয়াল্ড লরেন্স ছিলেন থিয়েটারের অভিনেতা।

লন্ডনের মেট্রোর আন্ডারগ্রাউন্ডের ঘোষক ছিলেন তিনি। ১৯৫০ সালে তার কণ্ঠস্বরে রেকর্ড করা হয়েছিল। ‘অনুগ্রহ করে দূরত্ব বজায় রাখুন’ তার কণ্ঠের এই ঘোষণা শুনতেই রোজ সেখানে ছুটে যান তার প্রিয়তমা স্ত্রী।

লরেন্সের এই কণ্ঠস্বর যাত্রীদের সতর্ক করতো। মেট্রোরেল যখন স্টেশনে প্রবেশ করত, তখন এই ঘোষণা শুনে সবাই দূরে সরে দাঁড়াতেন। অভিনয়ের পাশাপাশি একটি পর্যটন সংস্থার হয়ে কাজ করতেন লরেন্স।

বিবিসিতে একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় মার্গারেট বলেন, তার মৃত্যুর পর থেকে আমি রোজ বসে থাকতাম মেট্রো স্টেশনে। অপেক্ষা করতাম, কখন আসবে পরবর্তী ট্রেন আর আমি শুনতে পাবো তার কণ্ঠ।

২০১২ সালের নভেম্বর মাস। একদিন এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে বসেছিলেন মার্গারেট। হঠাৎ তিনি লক্ষ করেন, মেট্রো স্টেশনে আর শোনা যাচ্ছে না লরেন্সের কণ্ঠস্বরের ঘোষণা।

মেট্রোরেলের কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হন মার্গারেট। কেন লরেন্সের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না, প্রশ্ন করেন। তারা জানান, নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘোষণা হচ্ছে মেট্রো স্টেশনে। সে কারণেই লরেন্সের কণ্ঠস্বর আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। মার্গারেট ভেঙে পড়েন।

কর্তৃপক্ষকে জানান যে, স্বামীর কণ্ঠস্বর শুনবেন বলে তিনি রোজ এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে এসে বসে থাকতেন। এ বিষয়টি জানতে পেরে খারাপ লাগে কর্তৃপক্ষেরও। তারা লরেন্সের ঘোষণার রেকর্ড মার্গারেটকে দেন। পাশাপাশি স্থির করেন, অন্তত এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনে যাত্রীদের সতর্ক করবে লরেন্সের কণ্ঠস্বর।

লন্ডনের মেট্রো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক মুখপাত্র বলেন, মার্গারেটের কথা আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। ওই ঘোষণার রেকর্ডের কপি তৈরি করে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই স্টেশনে লরেন্সের কণ্ঠস্বরে ঘোষণা চালু করা হয়।

লন্ডনের সব মেট্রো স্টেশনে এখন ঘোষণা হয় ডিজিটাল প্রযুক্তিতে। একমাত্র ওয়েস্টমিনস্টারের এমব্যাঙ্কমেন্ট স্টেশনেই রয়েছে গিয়েছে লরেন্সের সেই পুরোনো কণ্ঠস্বর, অনুগ্রহ করে দূরত্ব বজায় রাখুন।

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে মরোক্কোয় গিয়ে পরিচয় হয় মার্গারেটের সঙ্গে। একে অপরের প্রেমে পড়েন। লন্ডনে ফিরে এসে বিয়ে করেন তারা। এরপর ১৫ বছর এক ছাদের নিচে কাটিয়েছিলেন তারা। ২০০৭ সালে মারা যান লরেন্স। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন মার্গারেট। খুব ফাঁকা লাগতো তার।

সে সময় তার মনখারাপের সঙ্গী হয় মেট্রো স্টেশনে বাজতে থাকা তার স্বামীর কণ্ঠস্বর। সেই থেকে রোজ এমব্যাঙ্কমেন্ট মেট্রো স্টেশনে গিয়ে বসে থাকতেন মার্গারেট। বার বার শুনতেন স্বামীর কণ্ঠের ঘোষণা।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2023