আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘হযরত আলী (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
ভুমিকা:
আলী ইবন আবী তালিব (হযরত আলী) (৬৫৬ – ৬৬১) ইসলামের চতুর্থ ও শেষ খলিফা। তিনি ছিলেন আবু তালিবের পুত্র। তাঁর মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ। হয়রত আলী কোরায়েশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়স থেকেই তিনি হযরত মুহাম্মদের সঙ্গে লালিত-পালিত হন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি হযরত মুহাম্মদের সাথে নামাজ আদায় করতেন। বালকদের মধ্যে তিনি সর্ব প্রথম বালক যিনি নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন অকুতভয় যোদ্ধা। বদর যুদ্ধে বিশেষ বীরত্তের জন্য মুহাম্মদ তাঁকে জুলফিকার নামক তরবারি উপহার দিয়েছিলেন। খাইবারের সুরক্ষিত কামূস দুর্গ জয় করলে মহানবী তাঁকে “আসাদুল্লাহ” বা আল্লাহর সিংহ উপাধি দেন।
নাম ও পরিচয়:
তাঁর নাম আলী, কুনিয়াত আবুল হাসান, আবু তুরাব। পিতার নাম আবু তালেব, মাতার নাম ফাতেমা বিনতে আসাদ। তাঁর উপাধি ছিল হায়দার, আসাদুল্লাহ, মুরতাযা। তিনি ছিলেন হাশেমী বংশোদ্ভূত এবং রাসূল (স)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা।
নসবনামা:
তাঁর নসবনামা হলো, আলী ইবনে আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুশাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কাব ইবনে লুয়াই আল হাশেমী আল কুরাইশী।
জন্ম তারিখ:
তাঁর জন্মতারিখ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে সর্বসম্মত মতানুসারে তিনি মহানবী (স)-এর নবুয়তের ১০ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন।
ইসলাম গ্রহণ:
বালকদের মধ্যে হযরত আলী (রা)-ই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে ইসলাম গ্রহণকালীন তাঁর বয়স নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনায় ৮/১০/১৫/১৬ বছর এসেছে। অধিকাংশের মতে, তিনি ৮ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।
মহানবী (স)-এর সাথে সম্পর্ক:
রাসূল (স) হযরত আলী (রা)-কে খুবই ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন রাসূল (স)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা। হিজরী দ্বিতীয় সনে রাসূল (স)-এর নয়নের মণি ফাতেমা (রা)-এর সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
হিজরত:
রাসূল (স) মদিনায় হিজরতকালে আলী (রা)-কে নিজের বিছানায় শুইয়ে রেখে গিয়েছিলেন। মক্কার লোকদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে তিন দিন পর তিনি মদিনায় হিজরত করেন। রাসূল (স)-এর এ দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ بِاليْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً
জেহাদে অংশগ্রহণ:
রাসূল (স)-এর যুগে সংঘটিত সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। প্রত্যেক যুদ্ধেই তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। খায়বার যুদ্ধে ইহুদিদের বড় বড় দুর্গগুলো তাঁর হাতেই ধ্বংস হয়। তাবুক যুদ্ধে তিনি রাসূল (স)-এর নির্দেশ পালনার্থে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এ ব্যাপারে রাসূল (স) তাঁকে বলেন- الا ترضى أنْ تَكُونَ مِنِّى بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسى
হিজরী সন প্রবর্তনে অবদান:
হযরত আলী (রা)-ই প্রথম হযরত ওমর (রা)-কে হিজরতের সনকে ইসলামী সনের প্রারম্ভ হিসেবে গ্রহণের পরামর্শ দেন। (সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ পৃঃ ৬৯)
খেলাফত লাভ:
হযরত ওসমান (রা)-এর ইন্তেকালের পর হিজরী ৩৫ সালে তিনি খেলাফতের মসনদে সমাসীন হন। প্রায় ৬ বছর বৎ এ দায়িত্ব যথাযোগ্যভাবে পালন করেন।
জ্ঞান-গরীমা:
তিনি ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী, আরবি ব্যাকরণের প্রবর্তক। তাঁর জ্ঞানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাসূল (স) বলেছেন- أَنَا مَدِينَةُ الْعِلْمِ وَعَلِيُّ بَابُهَا অর্থাৎ, আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী হলো সে শহরের প্রবেশদ্বার।
হাদীসশাস্ত্রে অবদান:
হাদীসশাস্ত্রে হযরত আলী (রা)-এর অবদান অপরিসীম । অত্যন্ত সতর্কতা সত্ত্বেও তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা আল্লামা আইনী (র)-এর মতে ৫৮৬টি। ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) সম্মিলিতভাবে ২০টি, এককভাবে ইমাম বুখারী ৯টি ও মুসলিম ১৫টি হাদীস স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা করেন।
শাহাদাত বরণ:
হযরত আলী (রা) ৪০ হিজরী সনের ১৮ রমযান শুক্রবার ফজর নামাযে যাওয়ার পথে খারেজী ঘাতক আবদুর রহমান ইবনে মুলযিমের তলোয়ারের আঘাতে আহত হয়ে তিন দিন পর ২১ রমযান সোমবার শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র হযরত হাসান (রা) তাঁর জানাযা পড়ান। শাহাদাতের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
দাফন:
কুফার জামে মসজিদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। কারো মতে, নাজাফে আশরাফে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
Leave a Reply