আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘উম্মু হাবীবা (রাঃ)’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
নাম ও বংশ পরিচয়:
তাঁর প্রকৃত নাম রামলাহ মতান্তরে হিন্দ। তবে প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ মতে তাঁর নাম রামলাহ। কুনিয়াত বা উপনাম উম্মু হাবীবা। পূর্ণ বংশ পরিচিতি হচ্ছে রামলাহ বিনতু আবী সুফিয়ান ছাখার ইবনে হারব ইবনে উমাইয়াহ ইবনে আব্দে শাম্স ইবনে আব্দে মানাফ ইবনে কুছাই।
তাঁর মাতার নাম ছাফিয়াহ বিনতু আবীল ‘আছ ইবনে উমাইয়াহ ইবনে আব্দে শাম্স। যিনি ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর ফুফু ছিলেন। কারো মতে উম্মু হাবীবা (রাঃ)-এর মাতার নাম আমিনা বিনতু আব্দিল উযযা ইবনে হিরবান ইবনে আওফ ইবনে ওবায়দ ইবনে ‘আবীজ ইবনে আদী ইবনে কা‘ব।
জন্ম ও শৈশব:
উম্মু হাবীবা (রাঃ) নবুওয়াতের ১৭ বছর পূর্বে মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশবকাল সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।
বিবাহ ও ইসলাম গ্রহণ:
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর ফুফাত ভাই ওবায়দুল্লাহ ইবনু জাহাশ এর সাথে উম্মু হাবীবার প্রথম বিবাহ হয়। ওবায়দুল্লাহ ইবনু জাহাশ ছিলেন হারব ইবনু উমাইয়ার মিত্র। বিবাহের পরে ইসলামের প্রাথমিক দিকে উম্মু হাবীবা ও ওবায়দুল্লাহ দ্বীনের দাওয়াত পেয়ে একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন।
ওবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের ঔরসে ও রামলার গর্ভে মক্কায় হাবীবা নামক এক কন্যা জন্মগ্রহণ করে। এ মেয়ের নামানুসারে রামলার উপনাম হয় উম্মু হাবীবাহ।
হিজরত ও ইসলাম গ্রহণ:
স্বামীর সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হাবশায় হিজরত করেন। এখানে পৌঁছলে ওবায়দুল্লাহর ঔরসে তার কন্যা সন্তান হাবীবার জন্ম হয়। এ কন্যার নামেই তিনি উম্মে হাবীবা বলে খ্যাত হন। কিছুদিন পর স্বামী ওবায়দুল্লাহ্ ইসলাম ত্যাগ করে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। তার ধর্ম ত্যাগের পূর্বে হযরত উম্মে হাবীবা তাকে অত্যন্ত বীভৎস আকৃতিতে স্বপ্নে দেখেন।
এ স্বপ্নের ফলে তিনি খুব ঘাবড়ে যান এবং মনে মনে বলেন, সত্যিই তার অবস্থা খারাপ বলে মনে হচ্ছে। ভোরে ওবায়দুল্লাহ তাকে বললেন, উম্মে হাবীবা! ধর্মের ব্যাপারে চিন্তা করে বুঝলাম খ্রীষ্টবাদের চেয়ে উত্তম ধর্ম নেই। আমি ইতোপূর্বে মুসলমান হলেও এখন পুনরায় খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করছি।
হযরত উম্মে হাবীবা খুব তিরস্কার করলেন, স্বপ্নের কথাও বললেন। কিন্তু তার ওপর কোন প্রভাব পড়লোনা কোন প্রতিক্রিয়া হলো না। শেষ পযর্ন্ত তিনি খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। ধর্মত্যাগীর জীবন যাপন করে মদ্যপান অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন।
হিযরত ও ইসলাম গ্রহণ:
স্বামীর সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হাবশায় হিযরত করেন। এখানে পৌঁছলে ওবায়দুল্লাহর ঔরসে তার কন্যা সন্তান হাবীবার জন্ম হয়। এ কন্যার নামেই তিনি উম্মে হাবীবা বলে খ্যাত হন। কিছুদিন পর স্বামী ওবায়দুল্লাহ্ ইসলাম ত্যাগ করে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন।
তার ধর্ম ত্যাগের পূর্বে হযরত উম্মে হাবীবা তাকে অত্যন্ত বীভৎস আকৃতিতে স্বপ্নে দেখেন। এ স্বপ্নের ফলে তিনি খুব ঘাবড়ে যান এবং মনে মনে বলেন, সত্যিই তার অবস্থা খারাপ বলে মনে হচ্ছে।
ভোরে ওবায়দুল্লাহ তাকে বললেন, উম্মে হাবীবা! ধর্মের ব্যাপারে চিন্তা করে বুঝলাম খ্রীষ্টবাদের চেয়ে উত্তম ধর্ম নেই। আমি ইতোপূর্বে মুসলমান হলেও এখন পুনরায় খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করছি।
হযরত উম্মে হাবীবা খুব তিরস্কার করলেন, স্বপ্নের কথাও বললেন। কিন্তু তার ওপর কোন প্রভাব পড়লোনা কোন প্রতিক্রিয়া হলো না। শেষ পযর্ন্ত তিনি খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। ধর্মত্যাগীর জীবন যাপন করে মদ্যপান অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন।
বিয়ে:
স্বামীর ধর্ম ত্যাগের পর উম্মে হাবীবা হাবশায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছিলেন। ইদ্দত পূর্ণ হলে মহানবী বিয়ের পয়গাম নিয়ে আমর ইবনে উমাইয়া যামরীকে হাবশার বাদশা নাজ্জাশীর নিকট প্রেরণ করেন। তার পৌঁছা মাত্রই নাজ্জাশী স্বীয় দাসী আবরারার মাধ্যমে উম্মে হাবীবার নিকট রাসুলের বিয়ের পয়গাম পৌঁছান।
তিনি একথাও মুখে বলে দেন যে, মহানবী তোমার বিয়ের জন্য আমার কাছে লিখেছেন। বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য তুমি কাউকে উকীল নিযুক্ত কর। নবীজীর পক্ষ থেকে বিয়ের পয়গামের কথা শুনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে আবরাহাকে দু’টি রূপার চুড়ি, পায়ের দুটি মল এবং দু’টি রূপার আংটি দান করেন।
খালেদ ইবনে সাঈদকে এ সম্পর্কে অবহিত করে তাকে উকীল নিযুক্ত করেন। সন্ধ্যা হলে নাজ্জাশী স্থানীয় মুসলমান এবং জাফর ইবনে আবু তালেবকে ডেকে নিজে বিবাহ পড়ান। মোহরানার চারশ’ দীনারও নিজের পক্ষ থেকে খালেদ ইবনে সাঈদকে দেন।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে সকলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলে খালেদ ইবনে সাঈদ দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্য বলেন, বিবাহ উপলক্ষ্যে খাওয়ার আয়োজন করা আম্বিয়ায়ে কিরামের সুন্নাত। অতঃপর সকলকে ভোজে আপ্যায়িত করে বিদায় দেন।
এ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে হিজরী ৬ বা ৭ সালে। তখন উম্মে হাবীবার বয়স ৩৬/৩৭ হবে। বিয়ের পর হাবশা থেকে জাহাজ যোগে রওয়ানা হন। জাহাজ এসে মদীনার বন্দরে ভিড়ে। নবীজী তখন খায়বরে অবস্থান করছিলেন।
তবকাত এবং মুসনাদ ইত্যাদি নিভর্রযোগ্য জীবন চরিত গ্রন্থ থেকে বিয়ের বর্ণনা গৃহীত হয়েছে। বর্ণনার সত্যতা সর্ম্পকে কোন প্রশ্নেই উঠতে পারে না। কিন্তু এ বিবাহে মোহরানার পরিমাণ সম্পর্কে রেওয়ায়েত ঠিক বলে মনে হয় না।
আল্লামা ইবনে আবদুল বার, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এসব বিশেষজ্ঞরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে লিখেছেন যে, আযওয়াজে মুতাহহারাত এবং নবী দুলালীদের মোহর ছিল চারশ’ দিরহাম। এ ব্যাপারে তেমন মতবিরোধ নেই। এ কারণে মোহরের পরিমাণ নির্ভরযোগ্য নয় বলে মনে হয়।
ইন্তিকাল:
উম্মু হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর ইন্তিকালের পরে অনেক দিন বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে উম্মু হাবীবা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, আমাদের মাঝে সতীনের সম্পর্ক ছিল। আমাদের কোন ভুল-ত্রুটি হ’লে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিন। অর্থাৎ আপনিও আমাকে ক্ষমা করে দিন।
তখন আয়েশা বললেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আপনাকে মুক্ত করে দিয়েছেন। উম্মু হাবীবা বললেন, আপনি আমাকে খুশি করেছেন। আল্লাহ আপনাকে খুশি করুন। তিনি উম্মু সালমার নিকটও অনুরূপ বলে পাঠান। উম্মু সালমাও ঐরূপ অভিন্ন কথা বলেন।
তিনি স্বীয় ভ্রাতা মু‘আবিয়া ইবনু আবী সুফিয়ানের খিলাফতকালে ৪২ মতান্তরে ৪৪ হিজরীতে ৭৩ বছর বয়সে মদীনায় ইন্তিকাল করেন। মদীনার ‘মাকবারাহ বাবুছ ছাগীর’ নামক কবর স্থানে উম্মু সালমা আসমা বিনতু ইয়াযীদ আল-আনছারিয়ার কবরের পার্শ্বে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
Leave a Reply