আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘জমাদিউস সানি’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
আরবি বর্ষপঞ্জির হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। এর জোড়া মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। এটি হিজরি সনের পঞ্চম মাস। এর বাংলা অর্থ হলো প্রথম জুমাদা ও দ্বিতীয় জুমাদা বা প্রথম শীত ও দ্বিতীয় শীত; অর্থাৎ শীতকালের প্রথম মাস ও শীতকালের দ্বিতীয় মাস।
আরবে তৎকালে এই দুই মাস ছিল শীতকাল। আরবিতে মাস দুটির নাম হলো আল জুমাদাল উলা ও আল জুমাদাল উখরা বা আল জুমাদাল আখিরাহ অথবা আল জুমাদাস সানিয়াহ। সহজ করে বললে, প্রথমটি জুমাদাল উলা; দ্বিতীয়টি জুমাদাল আখিরা বা জুমাদাস সানিয়াহ।
আরবিতে ‘জুমাদাস সানিয়াহকে ‘জুমাদাল উখরাও বলা হয়। আমাদের উপমহাদেশে মাস দুটি ‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে সমধিক পরিচিত। (আল মুনজিদ)।
জমাদিউস সানি মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি কি: যেহেতু শীতকালে তীব্র শীতে তরল পানি জমে কঠিন বরফে পরিণত হয়ে যায়; জড় পদার্থগুলো জমে শক্ত হয়ে যায়; উদ্ভিদ ও জীব নিথর হয়ে যায়; প্রাণীরা নীরব হয়ে যায়; তাই এই মাসকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘জুমাদা’ হলো শীতকাল। এটি বসন্তের নিকটবর্তী, গ্রীষ্মের পূর্ববর্তী। ইসলামে অন্যান্য মাসের মতো এই মাসেও নফল ইবাদত, নফল রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া-দরুদের অনেক মূল্য রয়েছে।
তাই জমাদিউস সানি মাসে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত নফল নামাজ আদায় করা, কাজা রোজা থাকলে তা পুরা করা; মান্নত রোজা থাকলে তা আদায় করা।
এ মাসের নফল ইবাদত প্রথম তারিখের ১ম রাতে ৪ রাকাত নফল নামায যদি এভাবে পড়া হয়-প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১৩ বার সূরা ইখলাস পড়বে এ নামায সম্পন্নকারীর আমল নামায় ১ লক্ষ নেকী লিপিবদ্ধ হয় ও ১লক্ষ গুনাহ্ মুছে ফেলা হয়।
১ম তারিখের ১ম সন্ধ্যায় বাদ মাগরীব ১২ রাকআত নামায হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আদায় করতেন বলে বর্ণিত আছে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা ইখলাস এগার বার এবং তিন বার আয়াতুল কুরসী দ্বারা এ নামায আদায় করতেন।
১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে দুই রাকাত বিশিষ্ট ১২ রাকাত নামায আদায় করতে পারেন। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে পনের বার সূরা ইখলাস পাঠ করবেন। এ নামায আদায়কারীর সগীরা গুনাহ সমূহ মার্জনা করা হবে এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা নসীব হবে।
এ মাসের ২০ তারিখের পর হতে অবশিষ্ট দিনগুলি নফল রোজা রেখে প্রতি রাতে ২০ রাকাত করে নামায আদায় করা সাহাবায়ে কেরামের আমলের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা মাহে রজবকে স্বাগত জানানোর নিয়্যতে এ আমল করতেন।
নামাযের পর নিম্নের দোয়াটি ১০০ বার পাঠ করলে পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের সকল প্রকার অশান্তি হতে মুক্ত থাকবে। এ ছাড়া দোয়াটি প্রত্যহ ফজর ও মাগরীব নামাযের পর ১০০ বার পাঠ করলে দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনের সকল প্রকার অশান্তি হতে মুক্ত থাকবে
“হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ূমু ওয়া হুয়াল গনিইয়ুল মাতীন”
যেসব দিবসের, যেসব মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে; সেসব দিনে ও মাসে সবাই ইবাদত করবেন। করেও থাকেন—এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং যেসব দিন ও মাসের বিশেষ ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি, সেসব দিন ও মাসে বেশি করে নেক আমল করলে আমলকারী অবশ্যই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাবেন ও অগ্রগামী হবেন। ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহপাক আমাদের এ ফজিলতময় ও বরকতপূর্ণ জমাদিউস সানি মাসে বেশি করে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। প্রিয়নবি মুহম্মদের (সা.) প্রতি বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠানোর তৌফিক দিন। আমিন।
Leave a Reply