সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৩

নাগরিকত্ব বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ডোমিনিকা

নাগরিকত্ব বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ডোমিনিকা

সাত বছর আগে ‘ডোমিনিকা’ নামের ছোট্ট দেশটির উপকূলে একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। এর ফলে তখন মুষলধারে বৃষ্টি হয় এবং মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছোট্ট ক্যারিবিয়ান দ্বীপের প্রায় সব বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়।

ঘূর্ণিঝড়ের পর কার্যত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ‘ডোমিনিকা’। কয়েকমাস পানি সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল।

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দুই দ্বীপ দেশ পুয়ের্তো রিকো ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর মোটামুটি মাঝখানে অবস্থিত দেশটি তার সৈকতের চেয়ে সবুজ পর্বতমালার জন্য বিখ্যাত।

দেশের এমন সংকাটপন্ন অবস্থায় সরকার আয়ের এমন একটি উত্স সন্ধান করছিল যা অল্প সময়ের মধ্যে এই দেশটিকে পুনর্নির্মাণ করতে সহায়তা করবে। এই আয়ের উৎস সন্ধানে ডোমিনিকা সরকার ‘নাগরিকত্ব বিক্রি’র সিদ্ধান্ত নেয়।

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ডোমিনিকার প্রধানমন্ত্রী রুজভেল্ট স্কেরিট অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বার্তা দেন। যাতে বলা হয়, আমরা সারা বিশ্ব থেকে সবাইকে আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এর বিনিময়ে আমরা তাদের ডোমিনিকান নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

‘সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট’ এ প্রোগ্রামটির মাধ্যমে বিদেশিদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের বিনিময়ে সেই দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

‘দ্য গোল্ডেন পাসপোর্ট: গ্লোবাল মোবিলিটি ফর মিলিয়নিয়ারস’ বইয়ের লেখক ক্রিস্টিন সোরাক বিবিসিকে বলেন, সম্পদ তৈরির এই পদ্ধতি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর কাছে আকর্ষণীয়। এটি এমন দেশগুলোর কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি মাধ্যম যা সাধারণত তাদের দেশে ব্যবহৃত সব কিছু অন্য দেশ থেকে আমদানি করে।

বিশ্বে নাগরিকত্ব বিক্রির ঘটনা নতুন কিছু নয়, না ডোমিনিকাতে, না বিশ্বের অন্যান্য দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশ আছে যেখানে এই আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব বিক্রির অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এসব দেশের মাত্র অর্ধেকের এ বিষয়ে সক্রিয় কার্যক্রম রয়েছে।এর মধ্যে পাঁচটি ক্যারিবিয়ান দেশ এবং ডোমিনিকা অন্যতম।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অধ্যাপক সারক বলেন, শুরুর দিকে অনেক সমস্যা ছিল। বিনিয়োগকারীরা নাগরিকত্বের জন্য অর্থ প্রদান করেছিল, কিন্তু এর কারণে, দেশটি কখনই কোনো পরিবর্তন দেখেনি। যার জেরে একাধিক মামলাও হয়েছে।

কিন্তু সাত বছর আগে ঘূর্ণিঝড়ের পর দেশটি যখন ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বের প্রথম জাতি’ হওয়ার অঙ্গীকার করেছিল, তখন নাগরিকত্ব বিক্রিই দেশটির আয়ের প্রধান উৎস হয়ে ওঠে।

সরকারী তথ্য অনুযায়ী, এ কর্মসূচি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রসারিত হয়েছে এবং এর থেকে আয় দেশের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ খাতে আয় বেড়েছে এবং তা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ধীরে ধীরে ডোমিনিকা এই কর্মসূচির উপর আরও বেশি করে নির্ভর করতে শুরু করেছে।

ডোমিনিকার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে বিনিয়োগের বিনিময়ে নিজের দেশের নাগরিকত্ব বিক্রি করে ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছে দেশটি।

বিনিয়োগকারীদের আইনিভাবে ডোমিনিকান নাগরিকত্ব পাওয়ার দুটি উপায় রয়েছে। একটি হলো ইকোনমিক ডাইভারসিটি ফান্ডের মাধ্যমে সরকারকে সরাসরি এক লাখ ডলার অনুদান দেওয়া। দ্বিতীয়ত, সরকার অনুমোদিত রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে কমপক্ষে ২ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

সরকারের মতে, বিনিয়োগকারীরা ডোমিনিকান নাগরিকত্ব পাওয়ার পরে এখানে সব ধরণের কাজ এবং ব্যবসা করতে পারেন।

নাগরিকত্ব বিক্রির মাধ্যমে ডোমিনিকা বড় আকারে লাভবান হচ্ছে বলে মনে হলেও এত দ্রুত একটি দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টিও সম্প্রতি সমালোচিত হতে শুরু করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বাণিজ্য নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং নাগরিকত্ব বিক্রিকারী দেশগুলোর জন্য ভিসামুক্ত ব্যবস্থা স্থগিত করার প্রস্তাব করেছে।

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকরা ‘সিটিজেনশিপ থ্রু ইনভেস্টমেন্ট’ কর্মসূচিতে কেনা ৭ হাজার ৭০০ জনের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে।

এতে দেখা গেছে, এই নাগরিকত্ব পাওয়া অনেক মানুষদের তাদের দেশে কোনো না কোনো অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এছাড়া তাদের কেউ কেউ অন্য দেশে অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

ডোমিনিকা বলছে, অন্য দেশে অপরাধের রেকর্ড রয়েছে এমন আবেদনকারীদের নাগরিকত্ব নিষিদ্ধ। যাদের ফৌজদারি মামলা তদন্তাধীন, যাদের অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তাদের আবেদনও গ্রহণ করা হবে না।

কর্মকর্তারা আরও বলছেন, আবেদনে নিজেদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়া আবেদনকারীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় না।

ডোমিনিকান প্রধানমন্ত্রী রুজভেল্ট স্কেরিট স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, কেউ যদি আজই আমাদের দেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যান এবং যদি তিনি আগামীকাল এমন কিছু করেন যা তাকে আইনের আওতায় আনে তাহলে আপনি এর জন্য কর্মসূচিটির দোষ দিতে পারেন না।

জাতিসংঘের হিসেবে ডোমিনিকার জনসংখ্যা ৭৩ হাজার ৬ জন। আয়তনেও অবশ্য বড় নয় দেশটি, ৭৫১ বর্গ কিলোমিটার। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দুই দ্বীপ দেশ পুয়ের্তো রিকো ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর মোটামুটি মাঝখানে অবস্থান এর। সর্বশেষ যে ক্যারিবিয়ান দেশ ইউরোপীয়দের কলোনি ছিল সেটা ডোমিনিকা। দ্বীপদেশটি স্বাধীন হয় ১৯৭৮ সালে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024