মুদ্রাস্ফীতি ও শিল্পায়নের সংকট থেকে বের হতে পারছে না জার্মানি। ফলে কর্মস্থানের সুযোগ কমে যাচ্ছে, বাড়ছে বেকারত্ব। দেশটিতে বেকারের সংখ্যা ১০ বছরের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ। তবে অথর্নীতির এই সংকট আরও গভীর হওয়ার আগেই দেশটির নবনির্বাচিত সরকার পদক্ষেপ নেবে, এমন প্রত্যাশা বাসিন্দাদের।
সাড়ে আট কোটি জনসংখ্যার দেশ জার্মানিতে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই কর্মহীন মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে অবিশ্বাস্য হারে কমেছে কর্মসংস্থানের সুযোগও।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন করে শিল্পায়ন না হওয়া, পুরনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ, উৎপাদন কমে যাওয়া এবং রফতানিতে ধস নামায় জার্মানিতে অর্থনৈতিক সংকট গভীর হচ্ছে।
দেশটির কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থান সংস্থা বুন্দেসআগেন্টুয়ার ফুইর আরবাইট-এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডানিয়েল টেরৎসেনবার্গ জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশজুড়ে বেকারত্বের হার যেমন ছিল এখনও তেমনটাই রয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, জার্মানির ১৬টি অঙ্গরাজ্যে এখন কর্মহীনের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ লাখ। যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিকে ২০১৫ সালের বেকারত্বের হারের সঙ্গে তুলনা করেন টেরৎসেনবার্গ।
জার্মানির কর্মসংস্থান ব্যুরোর তথ্য মতে, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের বড় একটি অংশ চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অনেকে আবার খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
তবে শিল্পায়নে স্থবিরতা, রফতানি পণ্যরে উৎপাদন কমে যাওয়া, জ্বালানি শক্তির আকাশচুম্বী দাম ও মুদ্রস্ফীতির কারণেই চাকরির বাজারের পরিসর কমে আসছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণ কর্মীদের পাশাপাশি বিশেষ কাজে দক্ষ কর্মীরাও চাকরি হারাচ্ছেন বলে জানান তারা। বিশেষ করে দেশটির গাড়ি নির্মাণ খাতে চাকরি হারানো শ্রমিকের সংখ্যা এর মধ্যেই ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
জার্মানির আরবাইটসগেবার বা চাকুরিদাতা সমিতির সভাপতি রাইনার ডুলগার জানান, অর্থনীতির এই ভঙ্গুরতা ও কর্মহীনতার এই চিত্র জার্মানির মত দেশের জন্য অশনি সংকেত।
এদিকে শিল্পখাতে মেইড ইন জার্মানির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পণ্য প্রবেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের নির্বাহী সিদ্ধান্ত। ট্রাম্পের আগ্রাসি শুল্কনীতি ইইউসহ জার্মানির জন্যও কার্যকর হলে দেশটির অর্থনীতি থমকে যাওয়ার আশঙ্কা কর্মসংস্থান বিশ্লেষকদের।
তবে সময় থাকতে শিল্পখাতে জ্বালানি শক্তির দাম কমানো, নতুন করে ঋণ না করা, করের হার কমিয়ে দেয়া, শিল্পায়নে সংকট নিরসন, অবসরভাতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় জার্মানির নতুন প্রশাসন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন এমন প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।
Leave a Reply